‘তাজমহল আদতে তেজো মহালয়া’ নামে একটি শিব মন্দির। গেরুয়া শিবিরের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)। নিজেদের ‘নিউজলেটার’ এবং ওয়েবসাইটে তাজমহলের বেসমেন্টের ছবি প্রকাশ করে তাঁরা জানিয়েছে, তাজমহলের নিচের তলায় ২২ টি বন্ধ ঘরে কোনও রহস্যই নেই। সেগুলি আসলে তাজমহলের মূল কাঠামোরই অংশ।
২০১৫ সালে তাজমহলে হিন্দুদের পূজা-পাঠের অনুমতি দেওয়ার জন্য আগ্রা দায়রা জজ আদালতে সাতটি পিটিশন দাখিল করে একদল আইনজীবী। সেসময় তাঁরা দাবি করে, মুঘল জমানার এই বিশ্ববিখ্যাত সৌধ আদতে ‘তেজো মহালায়া’ নামে একটি শিব মন্দির ছিল। তারপর থেকেই শুরু হয় এই বিতর্কের। এরপর গত ৮ মে, বিজেপি’র অযোধ্যা ইউনিটের মিডিয়া-ইনচার্জ রাজনীশ সিং এক আবেদনে এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চের কাছে দাবি করেন, ‘তাজমহল নিয়ে পুরনো বিতর্ক রয়েছে। তাজমহলের প্রায় ২০টি কক্ষ তালাবদ্ধ এবং কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। ধারণা করা হয়, এসব ঘরে হিন্দু দেবতা ও ধর্ম সম্পর্কিত মূর্তি রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমি হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছি যাতে আর্কেওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে এই কক্ষগুলি খোলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এই কক্ষগুলি খোলা হলে, এই সংক্রান্ত যাবতীয় বিতর্ক থেমে যাবে আর তা করতে তো কোনও ক্ষতি নেই।’ তবে, গত ১২ মে এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চের বিচারপতিরা রাজনীশের এই আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন। তারপরেও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক থামেনি। ‘তেজো মহালয়া’ ইস্যুকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়ার কথা জানান রাজনীশ সিং।
এরইমাঝে সোমবার, ভারতের পুরতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি সংরক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসআই-এর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তাজমহলের নিচে ওই ঘরগুলি মধ্যে কোনও রহস্যই লুকিয়ে নেই। সেগুলি আসলে তাজমহলের মূল কাঠামোরই অংশ। তাছাড়া শুধু তাজমহলের তলাতেই যে এমন ঘর রয়েছে, তা নয়। দিল্লিতে হুমায়ুন সমাধির মতো মুঘল আমলে তৈরি বহু সমাধিক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায়।
একইসঙ্গে এএসআই-এর আধিকারিকরা জানিয়েছে, তাজমহলের নিচের তলায় সাধারণ দর্শকদের প্রবেশাধিকার না থাকলেও তারা নিয়মিত ওই জায়গা রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। সম্প্রতি তাজমহলের নদীর তীরে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ ঘরগুলির দেওয়াল ভঙ্গুর হয়ে পড়ায় গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যস্ত তা মেরামতের কাজ হয়েছে। মেরামতের আগে এবং পরের বেশ কয়েকটি ছবি ইতিমধ্যেই এএসআই'র নিউজলেটারে প্রকাশিত হয়েছে। গত ৫ মে ছবিগুলি সংস্থার ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে। ৯ মে সেগুলি সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলেও দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এর মধ্যে গোপনীয় বা লুকোছাপার কোনও ব্যাপার নেই, জানিয়েছে এএসআই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন