চায়ের আড্ডায় সাংবাদিকদের ডেকে তাঁদের ‘দলে টানতে' দলের কর্মীদের নির্দেশ দিলেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি প্রধান চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে। বিজেপি নেতার প্রকাশ্যে করা এই মন্তব্য নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
আহমেদনগরে ব্লক স্তরের বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশ্যে চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে বলেন, “সাংবাদিকদের চায়ের আসরে আমন্ত্রণ জানান। বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই কী বলতে চাইছি”। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে কোনও নেতিবাচক খবর যাতে প্রকাশ না হয় সেদিকেও দলীয় কর্মীদের নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি 'নির্দিষ্ট' কিছু সাংবাদিকদের নামের তালিকাও তৈরি করার নির্দেশও দিয়েছেন বাওয়ানকুলে।
বাওয়ানকুলের এই নির্দেশের একটি অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেই অডিওতে বাওয়ানকুলেকে বলতে শোনা গিয়েছে, “অনেক সময় ছোটখাটো নিউজ পোর্টালের ভিডিও সাংবাদিকরা খুব সামান্য ঘটনাকেও এমনভাবে পরিবেশন করেন, যেন খুব বড় বোমা বিস্ফোরণ হয়ে গিয়েছে। এইরকম সাংবাদিকদের একটা তালিকা তৈরি করুন, তাঁদের চায়ের আসরে আমন্ত্রণ করুন। তাঁরা যাতে আমাদের বিরুদ্ধে কিছু না লেখেন সেটা নিশ্চিত করুন। তাঁদের চায়ের আসরে আমন্ত্রণ জানানো মানে আমি কী বলতে চাইছি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।”
একেবারে তৃণমূল-স্তরের কর্মীদের তিনি আরও নির্দেশ দিয়েছেন, “সাংবাদিকদের ধাবায় নিয়ে যান, ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করান। আমাদের সম্পর্কে যেন কোনও নেতিবাচক খবর না হয়, সেটা নিশ্চিত করুন। আমাদের নিয়ে শুধুমাত্র ইতিবাচক খবরই প্রকাশ হওয়া উচিত। নিজের নিজের বুথকে রক্ষা করুন আগে।”
আগামী লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই ব্লক পর্যায়ের কর্মীদের স্থানীয় গণমাধ্যমকে 'হাতে রাখার' বার্তা দিচ্ছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। এই মন্তব্য বিরোধী শিবিরে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। বিরোধীরা বাওয়ানকুলে ও বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে ইচ্ছেমতো পরিচালনা করার অভিযোগ তুলেছে।
মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রধান বিজয় ওয়াদেত্তিয়ার এই নিয়ে বাওয়ানকুলেকে আক্রমণ করে বলেছেন, “সব সাংবাদিক বিকিয়ে যায়নি। আপনার কি মনে হয়, সাংবাদিকরা আপনাদের মন ভোলানো কথা মেনে নেবে? গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করতে পারেননি আপনারা, তাই আপনাদের শীর্ষ ও স্থানীয় নেতাদের অস্থিরতা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে আপনারা এখন সরাসরি প্রস্তাব দিতে শুরু করে দিয়েছেন?”
NCP নেত্রী তথা সাংসদ সুপ্রিয়া সুলেও চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে জানিয়েছেন, “সংবাদপত্র গণতন্ত্রে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বিজেপি রাজ্য সভাপতি এখন গণমাধ্যমকে কণ্ঠ রোধ করার শিক্ষা দিচ্ছেন। এটা একটা অত্যন্ত গুরুতর নিন্দনীয় কাজ। সাংবাদিকদের ঠিকমতো কাজ করতে না দেওয়াই বিজেপির মূল নীতি।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন