আদালতে বিচারের আগেই কোনও অভিযুক্ত বা বিষয়ের উপর 'মিডিয়া ট্রায়াল' (Media Trial) নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা (CJI NV Ramana)। বিশেষ করে, ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে (Electronic Media) আলোচনার বিষয়বস্তুর প্রবণতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিচারপতি রমনা জানান, মিডিয়া প্রায়শই এমন বিষয়ে নিজেদের রায় দিয়ে দিচ্ছে, যে বিষয়গুলিতে অভিজ্ঞ বিচারকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছেন না।
শনিবার, রাঁচিতে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিচারপতি রমনা। সেখানে তিনি বলেন,'আমরা মিডিয়াকে ক্যাঙ্গারু কোর্ট (kangaroo Courts) চালাতে দেখছি। তাঁরা (Media) আগে থেকেই এমন বিষয়ে রায় দিচ্ছে, যে বিষয়ে রায় দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন অভিজ্ঞ বিচারকরা। তথ্যবিহীন এবং এজেন্ডা পরিচালিত এই ধরনের আলোচনা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। এটি গণতন্ত্রকে পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।'
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে প্রধান বিচারপতি জানান, এই আচরণ মিডিয়ার গ্রহণযোগ্যতাকে 'শূন্যে' নামিয়ে আনবে।
এদিন প্রধান বিচারপতি বলেন, 'নিজের দায়িত্ব এবং সীমা লঙ্ঘন করে আপনারা আমাদের গণতন্ত্রকে দুই ধাপ পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রিন্ট মিডিয়ার এখনও একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গ্রহণযোগ্যতা শূন্যে নেমে আসছে।'
একইসঙ্গে, বিচারাধীন মামলা দ্রুত সমাধানের জন্য বিচার ব্যবস্থার পরিকাঠামো সংস্কারের উপর জোর দেন ভারতের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা।
ক্যাঙ্গারু কোর্ট (kangaroo Courts) আসলে কি?
মূলত, এটি (ক্যাঙ্গারু কোর্ট) একটি ব্যঙ্গাত্মক শব্দ। যখন কোন প্রতিষ্ঠান দেশের আইন বা ন্যায়বিচারের স্বীকৃত মান (recognized standards of law or justice) উপেক্ষা করে 'স্বঘোষিত রায়' জনগণের সামনে তুলে ধরে, তখন কটাক্ষ করে সেই প্রতিষ্ঠানকে ক্যাঙ্গারু কোর্ট বলা হয়।
তবে শুধু মিডিয়া বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নয়, বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যখন বিচার ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে আইনি বা নৈতিক বাধ্যবাধকতাকে অবজ্ঞা করে থাকেন।
ক্যাঙ্গারু অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় প্রাণী। তবে 'ক্যাঙ্গারু কোর্ট' শব্দের উৎপত্তি অস্ট্রেলিয়ায় হয়নি। ১৮৪৯ সালে এই শব্দটি প্রথম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। অনেকেই মনে করেন, ক্যাঙ্গারুর পেটের ওপরে একটি থলি থাকে। এটি দৃশ্যমান। এ থেকে মনে করা হয় যে, বাদী না বিবাদীর পক্ষে কী রায় ঘোষণা করা হবে, তা আগে থেকেই নির্ধারিত রয়েছে এখানে।
আবার অনেকেই মনে করেন, অন্য কারো পকেটে রয়েছে - ক্যাঙ্গারু কোর্ট। অর্থাৎ, এই কোর্ট স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ রায় দিতে অক্ষম। এ ধরনের ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে- যে কোর্ট বা আদালত প্রতিষ্ঠিত আইনকানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে স্বেচ্ছাচারমূলক রায় ঘোষণা করেন, সেসব আদালতের জন্য এ শব্দটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত হয়।
শনিবার, সেই একই শব্দ (ক্যাঙ্গারু কোর্ট) ব্যবহার করে ভারতের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতি ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রধান বিচারপতি রমনা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন