প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান সিপিআইএম নেতা এন শঙ্করাইয়া। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত সোমবার চেন্নাইয়ের এক বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। টি নগরের সিপিআইএম অফিসে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর দেহ শায়িত রাখা হবে। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বিশিষ্ট বাম নেতৃবৃন্দ।
১৯৬৪ সালের ১১ এপ্রিল যে ৩২ জন সদস্য সিপিআই-এর ন্যাশনাল কাউন্সিল মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে এসে সিপিআইএম গঠন করেন এন শঙ্করাইয়া ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি দীর্ঘদিন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন এবং সারা ভারত কিষাণ সভার শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯৫ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি সিপিআইএম তামিলনাড়ুর রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্বভার সামলান। পরে বয়সজনিত কারণে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৫ জুলাই ১৯২২ সালে থোথুকুদি জেলার কোভিলপাট্টিতে জন্মগ্রহণ করেন শঙ্করাইয়া। স্থানীয় অঞ্চলে প্রাথমিক পাঠ শেষে তিনি মাদুরাই আমেরিকান কলেজে ভর্তি হন এবং ইতিহাসে স্নাতক হন। অল্প বয়সেই তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন এবং যে কারণে একাধিকবার তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। তিনি প্রথম কারাবরণ করেন মাত্র ২০ বছর বয়সে, ১৯৪১ সালে। এরপর ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়ার কারণে তাঁর পড়াশুনায় ছেদ পড়ে।
জেল থেকে মুক্তির পর তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন এবং সিপিআই-এর ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর ১৯৪৬ সালে তাঁকে ফের গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি ছাড়া পান ১৯৪৭ সালে।
এই বছরের জুলাই মাসে মাদুরাই কামরাজ ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবার প্রস্তাব নেওয়া হলেও তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি তাতে সম্মতি দেননি। এই ঘটনায় রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী পর্বে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৭ (মাদুরাই ওয়েস্ট বিধানসভা কেন্দ্র), ১৯৭৭ এবং ১৯৮০ সালে (মাদুরাই ইষ্ট বিধানসভা কেন্দ্র) তামিলনাড়ু বিধানসভায় বিধায়ক নির্বাচিত হন। সিপিআইএম তামিলনাড়ুতে তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ছিলেন।
২০২১ সালে ডিএমকে সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে তামিলনাড়ুর সর্বোচ্চ সম্মান ‘থাগাইসাল তামিজহার’-এ ভূষিত করা হয়। এই সম্মানের অর্থমূল্য দশ লক্ষ টাকার সবটাই এই বামপন্থী নেতা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করে দেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন