তিরুভাল্লুরের জেলাশাসকের আশ্বাসে হিন্দুস্তান মোটর ও হিন্দুস্তান মোটর ফিন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেডের ছাঁটাই শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজন জেলাশাসকের দফতরের সামনে থেকে তাদের অনির্দিষ্টকালীন অবস্থান তুলে নিল শুক্রবার রাতে।জেলাশাসক তাদের বিষয়টি আগামী সপ্তাহে মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
শুক্রবার সকাল থেকে তাঁরা প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁদের দাবি জমি ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা পিসিএ অটোমোবাইলস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডে চাকরি দিতে হবে।
গাড়ি নির্মাতা পিসিএ অটোমোবাইলস তিরুভাল্লুরে অবস্থিত। এটি আন্তর্জাতিক গাড়ি নির্মাতা স্টেলান্টিস গ্রুপ এবং ভারতের সি কে বিড়লা গ্রুপের যৌথ উদ্যোগ। হিন্দুস্তান মোটরস লিমিটেড ও হিন্দুস্তান মোটর ফিন্যান্স সি কে বিড়লা গ্রুপের।
সিপিআইয়ের তামিলনাডু শাখার সম্পাদক আর মুথারাসনের সঙ্গে জেলাশাসক কথা বলে আশ্বাস দেন সোমবারে বিষয়টি মীমাংসা করার এবং তিনি আন্দোলন তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন। সংবাদ সংস্থা আইএএনএস-কে একথা জানিয়েছেন হিন্দুস্তান মোটরস ল্যান্ড গিভিং ফার্মার্স প্রোগ্রেসিভ অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ই শ্রীনিবাসন।
এইচ ইসমাইল নামে এক ছাঁটাই শ্রমিক যার দাদুর জমি ১৯৬৮ সালে অধিগ্রহণ করেছিল হিন্দুস্তান মোটর, তিনি বলেছেন আপাতত বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে সমাধান না হলে এই বিক্ষোভ পুনরায় শুরু করা হবে।
শুক্রবার সকালে অবস্থান বিক্ষোভের সূচনা করেন সিপিআই সাংসদ কে সুব্বারায়ন। এক শ্রমিকের কথা অনুযায়ী রাজ্য সরকার গান্ধীজয়ন্তীর দিনে কোন বিক্ষোভ হোক তা চায় না।
শ্রমিকরা এর আগে হিন্দুস্তান মোটরস লিমিটেড ও হিন্দুস্তান মোটর ফিন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেডে কর্মরত ছিলেন। তিরুভাল্লুরের ওই কারখানায় জাপানি মিৎসুবিসি মোটর কর্পোরেশনের ল্যান্সার, পাজেরোর মতো গাড়ি তৈরি হয়। এ ছাড়াও উৎপাদন চুক্তির ভিত্তিতে তৈরি হয় ইসুজু মোটরসের এম ৭ মডেলের গাড়ি।
পরে হিন্দুস্তান মোটর ফিন্যান্স কর্পোরেশন ১৭৫ জন স্থায়ী ও ১৫০ জন ঠিকা শ্রমিককে ছাঁটাই করে। কারখানা তুলে দেওয়াহয় পিসিএ অটোমোবাইলসের হাতে।
ইসমাইল জানিয়েছেন দুই জয়েন্ট ভেঞ্চার অংশীদারের সঙ্গে চুক্তিতে বলা ছিল যে পিসিএ অটোমোবাইলস শ্রমিকদের নিয়ে নেবে। তবুও তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে।
শ্রীনিবাসন জানিয়েছেন কর্মচারী হস্তান্তর চুক্তির সাপেক্ষে রাজ্য সরকার হিন্দুস্তান মোটর ফিন্যান্স কর্পোরেশনকে কারখানা ও অন্য সম্পত্তি পিসিএ অটোমোবাইলসকে হস্তান্তরের অনুমতি দেয়। কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তরের পরে স্থায়ী ও ঠিকা শ্রমিককে তাড়িয়ে দেওয়া হল।
শ্রীনিবাসনের কথা অনুযায়ী হিন্দুস্তান মোটরস তাদের আর্থমুভিং যন্ত্রবিভাগের জন্য ১৯৬৮ সালে তিরুভাল্লুরে প্রায় ৩৫৬ একর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে।
প্রাথমিকভাবে হিন্দুস্তান মোটর সরাসরি জমি কিনেছিল মালিকদের কাছ থেকে। কিন্তু যতটা জমি দরকার ছিল তা না পেয়ে তারা জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়। এর পরে জমির দাম সরকারের ঘরে জমা দেয় তারা। সরকার জমি তুলে দেয় কোম্পানির হাতে।
সেই সময় জেলাশাসক আশ্বাস দিয়েছিলেন জমি মালিকদের কোম্পানি তাদের আর্থমুভিং উপকরণ তৈরির কারখানায় চাকরি দেবে।
তবে প্রতিশ্রুতিমতো চাকরি না দেওয়ায় বিক্ষোভ হয়। তারপরে ৮২ জনকে চাকরি দেওয়া হয় ১৯৮০তে। তাদের বেশিরভাগই জমি মালিকের নাতি।
এক দশক ধরে বিক্ষোভের পরে নতুন করে ৮২ জনকে ১৯৯৭ সালে নেওয়া হয় ট্রেনি হিসেবে।
শ্রীনিবাসন ও ইসমাইল জানিয়েছেন, ট্রেনি শ্রমিকদের পাকা চাকরি ১০বছর পরে। হিন্দুস্তান মোটরস জমির বড় অংশ কাজে লাগায় মিৎসুবিশি মোটরস কর্পোরেশনের ল্যান্সার, পাজেরো মডেলের গাড়ি তৈরির জন্য।
আর্থমুভিং উপকরণ তৈরির কারখানার কিছু শ্রমিককে গাড়ি কারখানায় বদলি করা হয়। কয়েক বছর পরে ভারতীয় কোম্পানি কারখানা হস্তান্তর করে প্রথমে হিন্দুস্তান ফিন্যান্স কর্পোরেশন এবং পরে পিসিএ অটোমোবাইলসকে। ছাঁটাই হন স্থায়ী ও ঠিকা শ্রমিকরা।
হিন্দুস্তান মোটরস আর্থমুভিং উপকরণ বিভাগটিকে (যেখানে তৈরি হয় ডাম্পার, লোডার ইত্যাদি) বিক্রি করে দেয় আমেরিকান সংস্থা ক্যটারপিলারকে।
যাদের দাদু কারখানার জন্য জমি দিয়েছিলেন এমন ২২জন এবং আরও কয়েক জন শ্রমিক ছাড়া বেশিরভাগ স্থায়ী শ্রমিক হিন্দুস্তান মোটর ফিন্যান্স কর্পোরেশনের কাছ থেকে এককালীন ক্ষতিপূরণ নিতে রাজি হয়েছিলেন।
শ্রীনিবাসন আরও যা জানিয়েছেন তা হল, 'কোম্পানি আমাদের অনুমতি ছাড়াই আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থোক টাকা জমা করে দেয়। আমরা কোম্পানিকে, তামিলনাডু সরকারকে এবং পিসিএ অটোমোবাইলসকে লিখি। জোর দেওয়া হয় চাকরির দাবিতে এবং বলা হয় ব্যাঙ্কে জমা টাকা আমাদের মাসিক মজুরি হিসেবে বিবেচনা করা হোক।'
পিসিএ অটোমোবাইলসের ১৯০ একর জমির মধ্যে ১৫০ একরই খালি পড়ে আছে। শ্রীনিবাসন জানিয়েছেন তাঁরা জমি ফেরত চান যাতে চাষবাস করে পরিবার প্রতিপালন করতে পারেন।
- with inputs from IANS
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন