নোট বাতিল নিয়ে মোদী সরকার যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তা ‘বেআইনি’ ছিল বলে অভিহিত করেছেন বিচারপতি বি ভি নাগারথনা (BV Nagarathna)।
সোমবার, সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে তিনি জানান, ‘আমার বিবেচিত দৃষ্টিতে, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর, বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পুরনো ১০০০ টাকা এবং ৫০০ টাকার নোট বাতিলের পদক্ষেপটি ‘বেআইনি’ ছিল। কিন্তু, ২০১৬ সালের সেই বিষয়টি এখন আর পুনরুদ্ধার করা যাবে না।’
তিনি বলেন, নোট বাতিল ছিল ক্ষমতা প্রয়োগের একটি অনুশীলন, যা আইনের পরিপন্থী। তাই এটিকে বেআইনি বলা যায়।’
নোট বালিতের সিদ্ধান্ত বাতিলের যে আবেদন জানিয়েছিলেন মামলাকারীরা, তাকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ২৬ নং ধারা অনুযায়ী, নোট বাতিল নিয়ে স্বাধীনভাবে সুপারিশ করার কথা ছিল আরবিআই-র কেন্দ্রীয় বোর্ডের। কিন্তু, কেন্দ্র সরকারের পরামর্শে এটি (নোট বাতিল) করা উচিত হয়নি।’
বিচারপতি নাগারথনা আরও জানান, ‘যে পদ্ধতি মেনে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করা হয়েছিল, তা আইন অনুসারে ছিল না।’
সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের বিচারপতি নাগারথনা একইসঙ্গে জানান, নোট বাতিলের 'মহৎ উদ্দেশ্য' নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলছেন না। সমস্যা শুধুমাত্র আইনি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।
তিনি বলেন, নোট বাতিলের ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও সন্দেহ করছি না। হতে পারে এটি মহৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তবে, আইনি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এটিকে বেআইনি হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
বিচারপতি নাগারথনা আরও বলেন যে, ‘পূর্বের অনেক বিষয়ের মতো নোট বাতিলের বিষয়টিও সংসদীয় আইনের মাধ্যমে করা যেতে পারে, কিন্তু কখনই নির্বাহী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নয়।’
বিচারপতি নাগারথনা বলেন, ‘কেন্দ্র এবং আরবিআই (RBI)–এর জমা দেওয়া নথিগুলিতে- ‘কেন্দ্র সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী’ বাক্যাংশ রয়েছে। আর, তা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়- নোটি বাতিলের বিষয়ে কোনও স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করেনি আরবিআই (RBI)।’
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছিল ৫৮টি পিটিশন। যেখানে মামলাকারীদের যুক্তি ছিল, সঠিক পরিকল্পনা না করেই নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাই, অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।
কিন্তু, দীর্ঘ শুনানির পর, সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের ৫ জন বিচারপতির মধ্যে ৪ জন জানিয়েছেন, নোট বাতিল নিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে কোনও ভুল ছিল না।
এক পর্যবেক্ষণে বিচারপতি এসএ নাজির, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি এএস বোপান্না এবং বিচারপতি ভি রামাসুব্রহ্মণ্যম জানান, 'কীভাবে (নোট বাতিলের) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বিবেচনা করে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে পাল্টানো যায় না।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন