ভারত সরকারের প্রতিষ্ঠানে হিন্দিতে কাজ করা বাধ্যতামূলক! তাই কেন্দ্রের অধীনস্থ সকল বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ-কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ দেশের সর্বত্রই হিন্দি ভাষাকে শিক্ষার প্রধান মাধ্যম করতে চাইছে সরকারি ভাষা সম্পর্কিত কমিটি। শুধু তাই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতেও নিয়োগ নির্ভর করবে হিন্দি জানার উপর। একাদশতম সরকারি ভাষা সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে এমনটাই ঘোষণা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারি ভাষা সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। হিন্দিকে দেশের রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে সম্প্রতি তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে একটি সুপারিশ জমা দিয়েছেন। যেখানে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ রয়েছে, দেশের সমস্ত কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (আইআইটি, আইআইএম, এইমস ইত্যাদি) এবং অ-কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়) গুলিতে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে হিন্দি ব্যবহার করা উচিত। সেক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা হবে ঐচ্ছিক।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারি কাজেও ইংরেজি ভাষার বদলে হিন্দিকে প্রাধান্য দিতে হবে। এমনকি, সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রেও যারা হিন্দিভাষী বা হিন্দিতে দক্ষতা বেশি, নিয়োগের দৌড়ে তারাই এগিয়ে থাকবে। ইংরেজি প্রশ্নপত্র হলে প্রার্থীদের ধারণা হয় যে ইংরেজি ভাষাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই হিন্দি মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরী করতে হবে। কাজে নিযুক্ত হওয়ার আগে হিন্দি জানা বাধ্যতামূলক, এমন নিয়ম যুক্ত করতে হবে সরকারি ক্ষেত্রে।
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাজ যেমন ফ্যাক্স, ই-মেল, মন্ত্রকের চিঠি, সরকার আয়োজিত অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র, বক্তৃতা, সঞ্চালনাও হবে হিন্দিতে। এমনকি, কম্পিউটারেও হিন্দিভাষার ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দিতে বলা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, কোপ পড়তে চলেছে বিচার ব্যবস্থার উপরেও। শাহের কমিটি রিপোর্টে হিন্দিভাষী অর্থাৎ ক্যাটাগরি 'এ'-র (বিহার, ছত্তিশগড়, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি এবং আন্দামান নিকোবর) অধীন রাজ্যগুলির হাইকোর্টের রায় ও শুনানিতে হিন্দি বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে। সরকারি বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বাজেটের ৫০ শতাংশ খরচ করতে হবে হিন্দি বিজ্ঞাপনে।
তবে, ভাষা সংক্রান্ত এই সুপারিশের তীব্র বিরোধিতা করেছে সিপিআই(এম)। তাদের মতে, দেশের বৈচিত্র্য ও সংবিধান স্বীকৃত ভাষানীতিকে লঙ্ঘন করার চেষ্টা চলছে। এটি আরএসএস-র ঘোষিত ষড়যন্ত্র। এক দেশ, এক ধর্ম, এক ভাষার নীতি প্রয়োগ করা চেষ্টা।
নিজস্ব একটি ট্যুইটে সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি বলেছেন, ভারতের সমৃদ্ধ ভাষা বৈচিত্র্যের ওপরে আরএসএস-র 'হিন্দি-হিন্দি-হিন্দুস্তান' চাপিয়ে দেওয়া কোনওমতেই আমরা মেনে নেব না। সংবিধানের অষ্টম তফসিলে তালিকাভুক্ত ২২টি ভাষাকেই সমমর্যাদা দিতে হবে। বৈচিত্র্যই ভারতের বৈশিষ্ট্য।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন