কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে সম্মতি ছিল না রিজার্ভ ব্যাঙ্কের? সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে এমনই তথ্য। যা নিয়ে রীতিমতো চাপে পড়েছে কেন্দ্র।
২০১৬ সালে হঠাৎই ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি দাবি করেছিলেন সকলের সাথে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে তথ্য গোপন করেছিলেন মোদী। Indian Express-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নোট বাতিল নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।
২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর বিকেল ৫.৩০ মিনিটে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডের সাথে বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হয় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের প্রয়োজন নেই। যদিও ব্যাঙ্কের কথায় গুরুত্ব দেয়নি কেন্দ্র।
জাল নোট উদ্ধারের জন্য নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত অপ্রয়োজনীয় মনে করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বোর্ড। ব্যাঙ্কের দাবি, ভারতে বছরে ১৭ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই অর্থের তুলনায় জাল নোটের পরিমাণ অনেক কম।
কালো টাকা ফিরিয়ে আনার যে দাবি কেন্দ্র করেছিল, সেক্ষেত্রেও আপত্তি জানিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছিল, যারা কালো টাকা মজুত রাখে তারা নগদ টাকা মজুত রাখে না। তারা সেই টাকায় বেনামে সোনা, গয়না, জমি, বাড়ি সহ নানা সম্পদ কিনে মজুত রাখে। তাই বড় নোট বাতিলে নগদ কালো টাকা ধরা কোনওভাবে সম্ভব নয়। এই তথ্যগুলির মধ্যে একটিও সুপ্রিমকোর্টে জমা দেওয়া হলফনামাতে উল্লেখ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।
উল্লেখ্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, নোট বাতিলের চারদিন আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর দেশের মানুষের হাতে ছিল নগদ ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা। চলতি বছরের ২১ অক্টোবর এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০.৮৮ লক্ষ কোটি টাকায়।
শুধু তাই নয়, ২০২১ সালের ৮ অক্টোবরের হিসেব অনুযায়ী দেশের মানুষের হাতে নগদ ছিল ২৮.৩০ লক্ষ কোটি টাকা। এমনকি, ২০১৭-২০১৮ অর্থবর্ষে বাজারে নগদের জোগান যেখানে ১০.৭ শতাংশ ছিল, ২০২০-২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ১৪.৪ শতাংশ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নোট বন্দীর যৌক্তিকতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। শুনানীতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-র কৌঁসুলি আদালতে দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রের অর্থনৈতিক নীতিগত সিদ্ধান্তের উপর কোনও পর্যবেক্ষণ দিতে পারে না বিচার বিভাগ। তখন হুঁশিয়ারির সুরে আদালত জানিয়েছিল - ‘এ বিষয়ে হাত গুটিয়ে থাকতে পারে না বিচার বিভাগ।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন