'এই মুক্তি খুনি ও ধর্ষকদের সাহস যোগাবে' - বিলকিস কান্ডে আসামীদের মুক্তির বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন

এই মুক্তির প্রতিবাদে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমানা’কে চিঠি দিয়েছেন দেশের প্রায় ৬ হাজার মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী ও বিভিন্ন নাগরিক অধিকার মঞ্চের সদস্যেরা।
বিলকিস বানো
বিলকিস বানোগ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তিতে, ২০০২ সালের বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলায় ১১ জন আসামীকে মুক্তি দিয়েছে গুজরাট সরকার। এর প্রতিবাদে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমানা’কে চিঠি দিয়েছেন দেশের প্রায় ৬ হাজার মানবাধিকার কর্মী, সমাজকর্মী ও বিভিন্ন নাগরিক অধিকার মঞ্চের সদস্যেরা।

এক যৌথ বিবৃতিতে শীর্ষ আদালতকে তাঁরা জানিয়েছেন, ‘গণ-ধর্ষণ ও গণহত্যায় দোষী সাব্যস্ত ১১ জনের সাজা মকুব করার ঘটনা ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে - যাদেরকে এতদিন 'ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে', 'বিচার চাইতে' এবং 'বিশ্বাস' রাখতে বলা হয়েছে।’

এই বিবৃতিতে নাম রয়েছে- সৈয়দা হামিদ, জাফরুল-ইসলাম খান, রূপ রেখা, দেবকী জৈন, উমা চক্রবর্তী, সুভাষিণী আলী, কবিতা কৃষ্ণন, মায়মুনা মোল্লা, হাসিনা খান, রচনা মুদ্রাবয়না, শবনম হাশমী প্রমুখের।

এছাড়া, বিভিন্ন নাগরিক অধিকার মঞ্চের মধ্যে রয়েছে- সহেলি মহিলা রিসোর্স সেন্টার (Saheli Women’s Resource Centre), গামনা মহিলা সমুহ (Gamana Mahila Samuha), বেবাক কালেক্টিভ (Bebaak Collective), অল ইন্ডিয়া প্রগ্রেসিভ উইমেনস অ্যাসোসিয়েশন (All India Progressive Women’s Association), উত্তরাখণ্ড মহিলা মঞ্চ (Uttarakhand Mahila Manch), ফোরাম এগেনস্ট অপ্রেসন অফ ওমেন (Forum Against Oppression of Women), প্রগতিশীল মহিলা মঞ্চ (Pragatisheel Mahila Manch), পার্চম কালেক্টিভ (Parcham Collective), জাগ্রিত আদিবাসী দলিত সংগঠন (Jagrit Adivasi Dalit Sangathan), আম্মুম্যাট সোসাইটি (Amoomat Society), সেন্টার ফর স্ট্রাগলিং উইমেন এন্ড সহিয়ার (Centre for Struggling Women and Sahiyar) ।

সকলেই একযোগে, বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলায় ১১ জন আসামী সাজা মকুব প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘খুনি ও ধর্ষকদের এই মুক্তি সাহস যোগাবে। শুধু তাই নয়, এই ঘটনা ধর্ষণ ও মহিলাদের উপর অন্যান্য হিংসায় জড়িত পুরুষদের দায়মুক্তির দাবিকে জোরদার করবে।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা দাবি করছি যে, ন্যায়বিচারের প্রতি মহিলাদের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা হোক। আমরা দাবি করছি, এই ১১ জন দোষীর শাস্তি মকুবের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। সেইসঙ্গে, তাদের বাকি জীবনের জন্য কারাগারে পাঠানো হোক।’

২০০২ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন - নরেন্দ্র মোদী। তাঁর শাসন আমলেই, গোধরা পরবর্তী হিংসায় আহমেদাবাদের কাছে রন্ধিকপুর গ্রামে নৃশংস ধর্ষণের শিকার হন বিলকিস বানো। সেই সময় (২০০২ সালের ৩ মার্চ) তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর। তিনি পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। ধর্ষকেরা বিলকিস বানোর ৩ বছরের মেয়ে সহ তাঁর পরিবারের ৭ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

এই ঘটনায়, ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মুম্বাইয়ের সিবিআই আদালত, বিলকিস বানোর পরিবারের ৭ সদস্যকে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে বোম্বে হাইকোর্ট তাদের দোষী সাব্যস্ত করে।

কিন্তু, গত ১৫ আগস্ট দেশজড়ে কেন্দ্রের মোদী সরকার যখন ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ পালন করছে, সে সময় ১১ জন আসামীকে গোধারা জেল থেকে মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। এমনকি, এই আসামীদের জেল থেকে বেরোনোর পর মালা পরিয়ে স্বাগত জানানো হয়, সকলকে মিষ্টিমুখ করায় গেরুয়া শিবির।

বিলকিস বানো
BJP-অধীন ভারতের আসল চেহারা, ধর্ষক-খুনী মুক্তি পায়, তিস্তা শীতলাবাদ জেলে থাকেন: বিলকিস কাণ্ডে CPIM

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in