বিলকিস বানোর ১১ জন ধর্ষককে ‘আগাম’ মুক্তি দেওয়া নিয়ে গুজরাট সরকারকে তুলোধনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
মঙ্গলবার, বিচারপতি কে এম জোসেফ ও বিচারপতি বি ভি নাগারত্নার ডিভিশন বেঞ্চ কার্যত উষ্মা প্রকাশ করে বলেছে, 'গণধর্ষণ ও গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধে জড়িতদের মুক্তি দেওয়ার আগে অপরাধের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত ছিল সরকারের।'
গুজরাট সরকারের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে শীর্ষ আদালত বলে, 'এক গর্ভবতী মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্যাতিতার মামলাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা বা হত্যা মামলার সঙ্গে তুলনা করতে পারবেন না।'
'আপনি, আপেলকে কখনও কমলালেবুর সঙ্গে তুলনা করবেন না। ১১ ধর্ষক যে অপরাধ করেছে তা ঘৃণ্য ও নৃশংসতম। সাধারণ খুনের সঙ্গে গণহত্যাকে কখনও মেলানো যায় না। সমাজ এবং সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপরাধ হয়েছে। কাউকে মুক্তি দেওয়ার আগে তার অপরাধের বিষয়টি ভালো করে বিবেচনা করা উচিত।'
গুজরাট সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, 'প্রশ্ন হল - কোন উপাদান ধর্ষকদের সাজা মকুবের সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছে, এবং এ ক্ষেত্রে সরকার তার মনকে কাজে লাগিয়েছে কিনা।'
সরকারি আইনজীবীকে আদালত জানায়, 'আজ এটি বিলকিস বানোর ক্ষেত্রে ঘটেছে, আগামীদিনে এটি অন্য কারোর ক্ষেত্রে হতে পারে। তা, আপনি বা আমি হতে পারি। আপনি যদি ক্ষমা মঞ্জুর করার কারণগুলি না দেখান, তবে আমরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবো।'
গত ২৭ মার্চ, বিলকিস বানো মামলায় আগেই গুজরাট সরকারের উপর চাপ তৈরি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ঠিক কী কারণে খুন ও ধর্ষণে অভিযুক্তদের শাস্তি মুকুব করা হয়েছে, সে সম্পর্কে হলফনামা জমা দিতে গুজরাট সরকার এবং কেন্দ্রকেও নোটিস পাঠিয়েছিল বিচারপতি কেএম জোসেফ এবং বিচারপতি বিভি নাগরত্নার বেঞ্চ।
আজ, সেই মামলার শুনানি চালাকালীন আদালতের নির্দেশ মেনে হলফনামা জমা না দেওয়ায় গুজরাট সরকারকে কার্যত তুলোধনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আগামী ২ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানোকে ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সাত জনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয় মোট ১১ জন। ২০০৮ সালে ঘটনায় অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। কিন্তু গত বছর স্বাধীনতার দিবস পালনের দিনে অভিযুক্তদের রেহাই দেয় গুজরাটের একটি আদালত। ধর্ষকদের মুক্তির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ওঠে নিন্দার ঝড়।
অভিযুক্তদের আগাম মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিলকিস বানো। চ্যালেঞ্জ করা সেই মামলার শুনানিতে, সংঘটিত অপরাধকে ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি কেএম জোসেফ এবং বিচারপতি বিভি নাগরত্না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন