ধর্মীয় বৈষম্য এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। তাও আবার ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে। ঘটনাস্থল দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাত। অভিযোগ, দশম শ্রেণিতে ৮৭% নম্বর পেয়ে প্রথম হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলিম হওয়ায় ‘প্রথম’ পুরস্কার দেওয়া হল না এক ছাত্রীকে। পরিবর্তে ওই পুরস্কার পেল দ্বিতীয় স্থানাধিকারী। গুজরাতের মেহসানা জেলার লুনাভা গ্রামের শ্রী কে.টি পটেল স্মৃতি বিদ্যালয়ের এই ঘটনা ইতিমধ্যেই নেটমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে।
নিউজ পোর্টাল Wire-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে শ্রী কে.টি পটেল স্মৃতি বিদ্যালয়ে কৃতি ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলছিল। দশম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ায় পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল আরনাজবানু খানেরও। কিন্তু তার জায়গায় দ্বিতীয় স্থানাধিকারীকে মঞ্চে ডেকে ওই পুরস্কার দেওয়া হয়। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে বাবা সানওয়ার খানকে সব কথা খুলে বলে সে।
সানওয়ার এই ঘটনায় ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভ উগরে সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়েছেন, “আমার মেয়ে আমায় জানিয়েছে, প্রথম হওয়ার সুবাদে যে পুরস্কার তার পাওয়ার কথা ছিল সেটি দ্বিতীয় স্থানাধিকারীকে দেওয়া হয়েছে। আমি এই নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের থেকে কৈফিয়ত চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁদের প্রতিক্রিয়া আমার কাছে স্পষ্ট নয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আমার মেয়েকে নাকি আগামী ২৬ জানুয়ারি তার প্রাপ্য পুরস্কার দেওয়া হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন, ১৫ আগস্ট নয় কেন?”
তিনি আরও জানিয়েছেন, “প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চাষবাস করার সুবাদে এই দেশের মাটির সঙ্গে আমার পরিবারের শিকড় মিশে রয়েছে। আমাদের পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে এখানে কোনওরকম ধর্মীয় বৈষম্য ছাড়াই বসবাস করছে। কিন্তু আজ আমার মেয়েকে এই প্রথমবার নিজের স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেই ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদের শিকার হতে হল।”
যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক বিপিন পটেল জানিয়েছেন, “আমাদের স্কুল যে কোনওরকম বৈষম্যের ক্ষেত্রে একটি কঠোর নীতি মেনে চলে। ওই ছাত্রী পুরস্কার বিতরণের দিন স্কুলেই আসেনি এবং তার জন্য অনুষ্ঠান বেশ কিছুক্ষণ বন্ধও ছিল।”
যদিও প্রধানশিক্ষকের এই অভিযোগের সপাটে জবাব দিয়েছেন আরনাজবানুর বাবা সানওয়ার। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “আমার মেয়ে ওইদিন স্কুলেই ছিল। সারা স্কুলে বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। এই অভিযোগ যে মিথ্যা সেটা ওই ক্যামেরা থেকেই প্রমাণ হয়ে যাবে।”
এই গোটা ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। টুইটারে বিশিষ্ট লেখক সলিল ত্রিপাঠী লিখেছেন, “এটাই এখন মোদী-ফায়েড ভারতের অবস্থা।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন