ত্রিপুরায় শাসক দল বিজেপি জনবিচ্ছিন্নতায় ভুগছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে হবে। মঙ্গলবার ত্রিপুরায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর ২০-তম রাজ্য সম্মেলনে এভাবেই ক্ষমতার পরিবর্তনের আহ্বান জানালেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। এদিনের সভায় তিনি বলেন, দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ভুগে নিজেদের সুসংহত করুন। পরিস্থিতির পরিবর্তনে সক্রিয় ভূমিকা নিন।
সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য এদিন বলেন, জাতি গঠনে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা শিক্ষার। শিক্ষার মাধ্যমেই চরিত্র গঠন সম্ভব। সেক্ষেত্রে সৎ, সত্যবাদী, আত্মকেন্দ্রিক নয়, সমস্ত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠে দেশকে এগিয়ে যাওয়ার দৃষ্টিভঙ্গী একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। কিন্তু সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। শিক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অথচ সেই শিক্ষাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, নতুন শিক্ষানীতি বিভাজনের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রণয়ন হয়েছে। ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে। রাজ্যের সরকারও সেই নীতি অবলম্বন করছে। শিক্ষাকে লুণ্ঠনের মৃগয়াক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহারের দিকেই কেন্দ্রীয় সরকার এগিয়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে এদিন তিনি বলেন, ডাবল ইঞ্জিনের সরকার পরিচালিত হলেও, চালক তো একজন। তিনি দেশের সর্বনাশ করছেন। লেখাপড়া না জানলে চোখ-কান খুলবে না। চাকরি কোথায় সেই স্লোগান উঠবে না। সেই লক্ষ্য থেকেই শিক্ষার সর্বনাশ করা হচ্ছে।
মানিকের বক্তব্য, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাবেন না। তাঁদের ক্ষমতা থেকে সরাতে না পারলে মুক্তি পাবেন না। কিন্তু ত্রিপুরায় পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত ভোটের অধিকার যেখানে লুণ্ঠিত সেখানে আপনাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
তাঁর মতে, পরিস্থিতি সবসময় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। যাঁরা নিজেদের সর্বশক্তিমান মনে করেছিলেন তাঁরাও একই অবস্থানে রয়েছেন এমনটা ভাববার সুযোগ নেই। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম-বিরোধী সমস্ত শক্তি একজোট হয়ে বামফ্রন্টকে পরাস্ত করেছিল। সর্বোপরি প্রলোভনে পরিপূর্ণ স্বপ্ন দলিল সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু যাঁদের সহায়তায় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তাঁদের অনেকেই ইতিমধ্যে সঙ্গ ছেড়ে দিচ্ছেন।
মানিকের কথায়, ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিজেপি ও আইপিএফটির ছয়জন বিধায়ক দলত্যাগ করেছেন। তাঁরা প্রকাশ্যে অভিযোগ এনেছেন, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু প্রত্যাশা পূরণের বদলে হতাশ হতে হয়েছে। এই অবস্থা শাসক দলের জন্য বড় ধাক্কা, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
তিনি কটাক্ষ করে বলেন, বিধানসভা নির্বাচনের ১০ মাস আগে ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে। মূলত, ব্যর্থতা ঢাকতে, জনবিচ্ছিন্নতা দূর করতে এই পদক্ষেপ। বিজেপির পায়ের তলায় মাটি সরে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই অস্তিত্ব রক্ষায় দলের মুখ বদল করা হয়েছে। তবে, মুখ বদল করলে চলবে না, নীতির পরিবর্তন চাই।
তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ত্রিপুরায় নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে জেতাতে ভোট লুট করতে হয়েছে। তাতে শাসক দল শক্তির বদলে দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। ত্রিপুরায় প্রমাণিত হয়েছে, শাসক দল জনবিচ্ছিন্নতায় ভুগছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে হবে। শাসক দলের ভেতরে সংহতি ভাঙছে। যাঁরা শাসকদলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা পুরনো দলে ফিরে আসছেন। এই পরিস্থিতিতে শাসকদলের চিন্তাভাবনা পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা নির্বাচনে যে পন্থা অবলম্বন করা হয়েছিল তা থেকেও ঘৃণ্য পথে চলতে হবে। কারণ, তাঁরা মানুষকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই, বিধানসভা নির্বাচনের আগে অন্য রাজ্য থেকে ১০ হাজার কার্যকর্তা আনতে চলেছে।
মানিকের কথায়, ত্রিপুরায় পরিস্থিতি ক্রমশ ঘুরছে। তাই, নিজেদের সুসংহত করতে হবে। ছাত্র-শিক্ষক সকলের মধ্যে মিশতে হবে। শাসক দল যা চাইবে, সব করতে পারবে, এই ধারণা থেকে সরে আসতে হবে। তবেই রুখে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। এর সাথে তিনি আরও বলেন, নিজের ঘর বাদ দিয়ে অন্যকে বোঝানো সম্ভব নয়। তাই, প্রথমে নিজের ঘরে নজর দিতে হবে। তাঁর আবেদন, পরিস্থিতির পরিবর্তনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক দূরত্ব ঘোচান। আগামীর রাজনৈতিক সংগ্রামে অংশ নিন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন