ত্রিপুরায় নির্বাচনী ফল প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়েছে সন্ত্রাস। সিপিআই (এম) কর্মী সমর্থকদের উপরে বেপরোয়া হামলা, আক্রমণ শুরু করেছে বিজেপি বলে ত্রিপুরা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অভিযোগ, যে সব জায়গায় বাম প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে, সেখানে আক্রমণ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার পরে পরেই।
শুক্রবার ত্রিপুরা বামফ্রন্ট কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘শাসক বিজেপি দলের প্রাপ্ত আসন সংখ্যার নিরিখে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অপ্রত্যাশিত। ত্রিপুরার সাধারণ জনগণের অভিব্যক্তির সঙ্গে এই ফলাফল সামঞ্জস্যহীন।’ ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিজেপি ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে যে রাজনৈতিক সন্ত্রাস আক্রমণ সংগঠিত করেছিল ২০২৩-এর নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার সময় থেকেও এই বীভৎস সন্ত্রাস সংগঠিত করে চলেছে। ত্রিপুরা বামফ্রন্ট শাসক দলের এই অবর্ণনীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছে।
আগরতলা সহ পশ্চিম জেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পর থেকেই হামলা শুরু হয়েছে। বাম কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ও দোকানপাটে লুটপাট ভাঙচুর, মারধোরের একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। বেশ কয়েকজন বাম কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেবার ঘটনাও ঘটেছে।
সিপিআইএম পশ্চিম জেলা কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা লাগাতার সিপিআইএম সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১৮০ জন দলীয় কর্মীর বাড়ি ও দোকানে আক্রমণ চালানো হয়েছে। সিপিআইএম কর্মী শঙ্কর দেবনাথের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। খয়েরপুর, মজলিশপুর, প্রতাপগড়, মোহনপুর বিধানসভা এলাকায় আক্রমণের ঘটনা সবথেকে বেশি।
শুক্রবার সাব্রুম, খোয়াই, বিলোনিয়া, প্রতাপগড়, সোনামুড়া প্রভৃতি কেন্দ্রে সিপিআই (এম)’র জয়ী আসনগুলিতে মানুষের উপর নির্বিচার আক্রমণ চলেছে। রাত পর্যন্ত মহকুমা এলাকাগুলি থেকে সিপিআইএমকর্মীরা প্রাণ হাতে নিয়ে আগরতলার নানা জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন।
সিপিআইএম-এর অভিযোগ, সাব্রুমে বৃহস্পতিবার সারারাত আক্রমণ চলেছে বিভিন্ন এলাকায়। শ্রীনগর, মাধবনগর, দমদমা, হরিণার বিস্তীর্ণ এলাকায় রাতভর আক্রমণের জেরে পার্টিনেতা, কর্মী, সমর্থকরা প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় সিপিআই(এম) রানির বাজার ছোটখিল অঞ্চল অফিসে। মাধবনগরে সিপিআই(এম) রাজনগর অঞ্চল সম্পাদকের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। হামলা আক্রমণ থেকে মহিলারাও রেহাই পাচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার ফলপ্রকাশের পর থেকে সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি সাব্রুমে থেকে সেখানকার স্থানীয়দের পাশে আছেন।
বিলোনিয়া মহকুমাতে দুশোর বেশি বাড়ি ঘর দোকান আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই মহকুমায় ৩টি আসনের মধ্যে ২টিতে জয়ী হয়েছে সিপিআই(এম)। এরপরেই আক্রমণ নেমে এসেছে এই অঞ্চলে। আক্রান্ত হয়েছেন ঋষ্যমুখ ও বিলোনিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী অশোক মিত্র ও দীপঙ্কর সেন সহ বহু কর্মী সমর্থক দরদি।
জানা গেছে, খোয়াই বিধানসভার ৫৭টি বুথ এলাকার প্রতিটিতে আক্রমণ হচ্ছে। চলছে তোলা আদায়। বৃহস্পতিবার ভোট গণনার দিন দুপুর থেকে শুক্রবার রাত আটটা পর্যন্ত কয়েকশো আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে শুধু খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রেই। দোকানপাট ভাঙচুর করে মালপত্র, টাকাপয়সা লুট করে নেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলগুলির সমর্থক ব্যবসায়ীদের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক মানুষ বাড়িঘর ছাড়া। মহিলাদের ওপর শ্লীলতাহানির ঘটনাও বাদ যাচ্ছে না।
সিপিআই(এম) সোনামুড়া মহকুমা সম্পাদক রতন সাহার বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। ধনপুরে বিভিন্ন এলাকায় পার্টি সমর্থক, কর্মীদের বাড়িঘর আক্রমণ করে লুটপাট করা হয়েছে। জরিমানা করা হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে ১লক্ষ টাকা। উল্লেখ্য, সোনামুড়া মহকুমার সোনামুড়া এবং বক্সনগরে জয়ী হয়েছে সিপিআই(এম)।
একইভাবে যুবরাজনগর বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিআই (এম)’র বিজয়ী প্রার্থী শৈলেন্দ্রচন্দ্র নাথের রাবার বাগানে আগুন ধরিয়ে তিনশো গাছ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তেলিয়ামুড়া কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অশোক বৈদ্যের বোন, যুব কংগ্রেস নেতা শঙ্কর পালের বাড়ি সহ বহু বামকর্মী সমর্থকের বাড়ি ঘর আক্রান্ত হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন