অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে। অর্থাৎ অন্যায় যে করে সে তো অপরাধী বটেই, তার পাশাপাশি অন্যায় যে সহ্য করে বা দেখেও এড়িয়ে যায়, সেও সমান দোষী। রবি ঠাকুরের এই কবিতার সত্যতা আরও একবার প্রমাণিত হল মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নের ১২ বছরের নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনায়। অপরিচিত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছে উজ্জয়ন পুলিশ। পাশাপাশি, যারা যারা ধর্ষিত ওই নাবালিকাকে দেখেও তাড়িয়ে দিয়েছেন বা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি বা পুলিশকে খবর দেননি, এবার তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানাল পুলিশ।
উজ্জয়নে ধর্ষণের শিকার হয়ে রক্তাক্ত ও অর্ধনগ্ন অবস্থায় ১২ বছরের নাবালিকা বাড়ি বাড়ি ঘুরে একটু সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু কেউই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি, উল্টে তাড়িয়ে দিয়ে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন অনেকেই। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়া এই ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস রিপোর্টার)
এই ঘটনায় ধর্ষণের মামলার পাশাপাশি এবার যারা নাবালিকাকে সাহায্য করেননি বা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেও ‘তাড়িয়ে’ দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উজ্জয়ন পুলিশের এসিপি জয়ন্ত সিংহ রাঠোর। শুক্রবার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, “অপরাধ হয়েছে দেখেও যারা পুলিশকে খবর দেননি বা অভিযোগ দায়ের করেননি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পকসো আইনের ধারায় মামলা হতে পারে তাঁদের বিরুদ্ধে।” সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ওই ‘অপরাধী’দের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জয়ন্ত সিংহ।
ইতিমধ্যেই রাকেশ মালভিয়া নামের এক অটো-রিক্সাচালককে ভিডিও দেখে শনাক্তও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ, রাকেশ তার অটো-রিক্সায় ওই নাবালিকাকে যাত্রী হিসেবে তুলেছিল। প্রমাণ হিসেবে তার রিক্সার আসনে নাবালিকার রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেও পুলিশের কাছে যাননি রাকেশ। গোটা ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ উঠেছে। রাজ্যে নারী নিরাপত্তা নিয়ে বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে কংগ্রেস। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ কেন এই বিষয়ে এখনও কেন মন্তব্য করেননি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা নিয়ে খানিক ব্যাকফুটে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তিনি জানিয়েছেন, “ওই নাবালিকা আমারও মেয়ে, গোটা মধ্যপ্রদেশের মেয়ে। যেকোনো মূল্যে আমরা তার খেয়াল রাখব। আমি কথা দিচ্ছি, অপরাধীরা কঠিন শাস্তি পাবেই।”
ধর্ষিতা কিশোরীকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন শহরের মহাকাল থানার ইনস্পেক্টর অজয় বর্মা। কিশোরীর পরিবারের অনুমতি থাকলে তার সমস্ত দায়িত্ব ইনস্পেক্টর বর্মাকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উজ্জয়িনীর পুলিশ সুপার সচিন শর্মা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন