এক যুগান্তকারী রায়ে ইলেক্টোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করল সুপ্রিম কোর্ট। এই প্রকল্পটি রাইটস টু ইনফরমেশন এবং সংবিধানের ১৯(১)(এ) ধারা লঙ্ঘন করে, তাই এই প্রকল্প বাতিল হওয়া উচিত বলে পর্যবেক্ষণ শীর্ষ আদালতের। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে লোকসভা ভোটের মুখে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গেল মোদী সরকার বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে (SBI) ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিলের পর থেকে কেনা সমস্ত নির্বাচনী বন্ডের বিশদ তথ্য ৬ মার্চের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এরপর সেই তথ্য প্রকাশ্যে আনবে কমিশন। SBI-কে অবিলম্বে বন্ড বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
শীর্ষ আদালত বলেছে, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কালো টাকার সমস্যা মোকাবিলার যে দাবি কেন্দ্র সরকার করেছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। কে অনুদান দিচ্ছে, তাঁর নাম প্রকাশ করা আবশ্যক।
উল্লেখ্য, ইলেক্টোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ড হল সুদ বিহীন বন্ড, প্রমিসরি নোট (Promissory Note) বা ডিমান্ড ড্রাফট (Demand Draft)-এর মতো। বিভিন্ন টাকার অঙ্কে এই বন্ডগুলি পাওয়া যায়, যেমন ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং ১ কোটি টাকার।
যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা এই বন্ডগুলি স্টেট ব্যাঙ্ক (SBI) থেকে কিনে চাঁদা হিসাবে তা রাজনৈতিক দলগুলিকে দিতে পারেন। পরে সেই বন্ডগুলি ভাঙিয়ে নিজেদের অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারে রাজনৈতিক দলগুলি। এই নির্বাচনী বন্ডগুলি (চাঁদা হিসাবে) কারা দিয়েছে, তাদের নাম প্রকাশ করতে হয় না রাজনৈতিক দলগুলিকে। ফলে কোন কর্পোরেট সংস্থা কোন রাজনৈতিক দলকে কত অনুদান দিচ্ছে তা প্রকাশ পেত না।
ক্ষমতায় এসেই অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল মোদী সরকার। ২০১৭ সালের বাজেটে বর্তমানে প্রয়াত অরুণ জেটলি এই প্রকল্পের কথা প্রথম ঘোষণা করেন। এই প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে সিপিআইএম সহ চারটি সংস্থা। এর আগের নিয়ম অনুযায়ী, ২০০০০ টাকার বেশি অনুদান দিলেই দাতার বিবরণ প্রকাশ করতে হত রাজনৈতিক দলকে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন