নেট পরীক্ষায় যদি বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে, তাহলে ব্যবস্থা নিতে কোনোভাবেই দ্বিধা করা হবে না। যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরীক্ষা বাতিল নিয়ে তীব্র আন্দোলনের মুখে এমনই জানাল কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক। পাশাপাশি আরও জানানো হয়েছে, পুরো ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের উপরে দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব গোবিন্দ জয়সওয়াল জানিয়েছেন, “পুরো বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্যই সিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নেট পরীক্ষায় যদি কোনও বেনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়, তা হলে ব্যবস্থা নিতে কোনও রকম দ্বিধা করব না আমরা।“
মঙ্গলবার পরীক্ষা হয়েছে ইউজিসি নেট। তার একদিনের মধ্যেই বুধবার সন্ধ্যায় এই পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা করা হয়েছে। কেন তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। পাশাপাশি, নিটের মতো নেটেও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে।
গোবিন্দ জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ‘‘১৮ জুন এনটিএ যে ইউজিসি-নেট পরীক্ষা নিয়েছিল, তাতে ৯ লক্ষ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রকের মনে হয়েছে, এই পরীক্ষায় অনিয়মের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মন্ত্রক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি সিবিআইয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।’’
গোবিন্দ আরও বলেছেন, “শিক্ষা মন্ত্রক অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না। তদন্ত চলছে বলে আমরা বিশদে কিছু জানাচ্ছি না। এনটিএ-র নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে এবং অনেক অংশীদার রয়েছে। পুরো বিষয়টিই তদন্তাধীন।“
কিন্তু মন্ত্রকের এই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে হতাশ এবং আশঙ্কিত পরীক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আবার কবে হবে পরীক্ষা? তা হলে কি তদন্ত প্রক্রিয়া না মেটা পর্যন্ত নতুন পরীক্ষার দিন ঘোষণা হবে না? এই প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে শীঘ্রই নতুন করে পরীক্ষার দিন ঘোষণা করা হবে।
গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নেট পরীক্ষা নেওয়া হত কম্পিউটারে। কিন্তু জুনের নেট-এ সেই পদ্ধতিতে বদল আনা হয়। এনটিএ কর্তৃপক্ষের তরফে পরীক্ষার আগে জানানো হয়, কম্পিউটারের বদলে এ বার ওএমআর শিটে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কেন হঠাৎ করে বদল চালু পদ্ধতিতে? এই নিয়ে জয়সওয়াল খোলসা করে কিছু না বললেও তাঁর মন্তব্য, ‘‘এনটিএ-তে অনেক অংশীদার রয়েছেন। সব অংশীদারের কথা ভেবেই কোনও পদ্ধতিতে বদল আনা হয়।’’
মঙ্গলবার প্রায় ৯ লক্ষ পরীক্ষার্থী দুটি অর্ধে নেট পরীক্ষা দিয়েছে। এরপর সরকারি সূত্রে খবর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ‘ভারতীয় সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ (১৪সি)-এর জাতীয় সাইবার ক্রাইম থ্রেট অ্যানালিটিক্স ইউনিট থেকে পাওয়া কিছু তথ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষায় ‘প্রশ্ন ফাঁস’ সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়টি নজরে। এরপরেই মন্ত্রকের কাছে পরীক্ষা বাতিলের বার্তা পাঠায় এনটিএ।
প্রতিবছর জুন এবং ডিসেম্বর দুবার করে হয় ইউজিসি নেট পরীক্ষা। এটি ‘জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ’ প্রদান এবং দেশের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর’ নিয়োগের জন্য যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা। পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্বে থাকে এনটিএ। চলতি বছর ১৬ জুন হওয়ার কথা ছিল নেট। কিন্তু গত মাসের শেষে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয় কিছু কারণবশত পিছিয়ে ১৮ জুন হবে পরীক্ষা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন