নরেন্দ্র মোদীর জমানায় মানব উন্নয়নে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে ভারত। ২০১৯ সালে রাষ্ট্রসংঘের মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে (HDI) ভারতের অবস্থান ছিল ১২৯ স্থানে। ২০২০ তা হয় ১৩১। আর পতনের সেই ধারা জারি রেখে ২০২১ সালে তা নেমে এসেছে ১৩২ স্থানে। সম্প্রতি, মানব উন্নয়ন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসংঘ। তাতেই ধরা পড়েছে ভারতে মানব উন্নয়নের এই বেহাল চিত্র।
সাধারণত, মানব সম্পদ উন্নয়নের সূচক নির্ধারণে তিনটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে রাষ্ট্রসংঘ। এর মধ্যে প্রথম হলো- মানুষের দীর্ঘ সুস্থ জীবন। দ্বিতীয়ত, উন্নত শিক্ষা। তৃতীয়ত, উন্নত মানের জীবন যাত্রা। তিনটি ক্ষেত্রে সূচক নির্ধারণে দীর্ঘ সুস্থ আয়ু, শিক্ষাগত মান এবং মাথাপিছু আয় ও জীবন যাত্রার মানের অগ্রগতি কতটা ঘটেছে তা দেখা হয়।
রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ, যা বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মানব উন্নয়ন সূচকে।
জানা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২.৪ বছর। ২০২১ সালে তা কমে হয়েছে ৭১.৪ বছর। একই সময়ে ভারতীয়দের গড় আয়ু ৬৯.৭ বছর থেকে ৬৭.২ বছরে নেমে এসেছে।
রিপোর্টে উল্লেখ, ২০২০ সালে বিশ্বের ১৯১ টি দেশের মধ্যে ভারতের মানব উন্নয়নের মূল্যমান ছিল ০.৬৪৫ পয়েন্ট। ২০২১ সালে সেই মূল্যমান কমে হয়েছে ০.৬৩৩ পয়েন্ট। সাধারণত, এই মূল্যমানকে মধ্যমানের মানব উন্নয়নের দেশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
মূল্যমানের ভিত্তিতে HDI-কে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। ০.৮-১.০ পয়েন্টকে অত্যন্ত উচ্চ মানের মানব উন্নয়ন, ০.৭০ – ০.৭৯ পয়েন্টকে উচ্চ মানের মানব উন্নয়ন, ০.৫৫- ০.৭০ পয়েন্টকে মধ্য মানের মানব উন্নয়ন এবং ০.৫৫-এর নীচে থাকা পয়েন্টকে নিম্ন মানের মানব উন্নয়নকে বোঝানো হয়েছে।
রিপোর্টে উল্লেখ, বিভিন্ন দিক থেকে চরম দারিদ্রতার মধ্যে রয়েছেন ভারতের ২৭.৯ শতাংশ মানুষ। এছাড়া, দারিদ্রসীমার নিচে রয়েছেন দেশের ২২ শতাংশ মানুষ। যাদের আয় দৈনিক আয় ১৬০ টাকা। ভারতের মাথা পিছু আয়ের স্কোর হলো ০.১২৩। যা হাইতির পিছনে, ইন্দোনেশিয়ার থেকে আগে। ভারতে এই পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হল - আয়ে বিপুল বৈষম্য।
ভারতে আয়ের বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে ১ শতাংশ ধনীর দখলে রয়েছে দেশের ২১.৭ শতাংশ সম্পদ। অন্যদিকে, ৮৫ শতাংশ মানুষের কাছে রয়েছে দেশের মাত্র ১৯.৮ শতাংশ সম্পদ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন