কাজের অভাব, বেকারত্বের হাহাকার। গত দু'বছরের কোভিড পরিস্থিতিতে কর্মহীনের সংখ্যা বৃদ্ধি। এরইমধ্যে কর্মসংস্থান প্রকল্পে বরাদ্দ কমাল কেন্দ্র। কম মজুরির রেগা প্রকল্পে কাজ পাচ্ছেন না কর্মহীন পরিযায়ী শ্রমিকরা। নজিরবিহীন প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন সিপিআই(এম) সাংসদ ভি শিবদাসন।
কেন্দ্রীয় বাজেটে দেখা গিয়েছে, কর্পোরেটদের তোফা বিলি করতে কেন্দ্র সবরকম ব্যবস্থা নিলেও কর্মসংস্থানে বিশেষ নজর দেয়নি। শিবদাসন বলেন, গত বছর যেখানে রেগায় বরাদ্দ হয়েছিল ৯৮ হাজার কোটি টাকা, সেখানে চলতি বছরের কাজের চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৭৩ হাজার কোটি টাকা। শহরে রেগা প্রকল্পে কাজের দাবি জানানো হলেও তা খারিজ করে দেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ।
গ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। পরিযায়ীরা গ্রামে ফিরে কাজ পাচ্ছেন না। এই বরাদ্দ প্রসঙ্গে শিবদাসন বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে কর্পোরেট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে কেন্দ্র। অথচ শ্রমিকদের কাজে যোগদান বাড়াতে পারছেন না। কাজের চাহিদা বাড়ছে, অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ তত কমছে।
সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ সমীক্ষা জানাচ্ছে, ২০১৯ সালের শেষে দেশে রেগা প্রকল্পে নাম লিখিয়েছিলেন ১.৭ কোটি মানুষ। ২০২০ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ২.৭ কোটিতে। চলতি বছরে দেশের কাজের পরিমাণ আর বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ যেখানে বাড়ানো উচিত ছিল, সেখানে ২৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হল।
কর্মহীন বৃদ্ধির সংখ্যা বেড়ে গেলেও বরাদ্দ কমে গিয়েছে। রেগার মজুরিও বকেয়া পড়েছে। রাজ্য পিছু বকেয়া বাকি পাঁচ- ছয় মাসের। পশ্চিমবঙ্গে বকেয়া মজুরির পরিমাণ ৭৫৩ কোটি টাকা, উত্তরপ্রদেশে ৫০৭ কোটি, রাজস্থানে ৫৫৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় শ্রম দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, অদক্ষ গরিব শ্রমিকদের পাশাপাশি দক্ষ শিক্ষিত শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছেন। প্রতিবছর প্রায় ৫০ লক্ষ শিক্ষিত শ্রমিক যুক্ত হচ্ছেন শ্রম বাহিনীতে। ২০১৯ সালের তথ্য বলছে এই অংশের ৩.২ কোটি শ্রমিক আজ কর্মহীন। মহামারির আগে কাজ হারিয়েছেন প্রায় এক কোটি।
বেকারির সঙ্গে রয়েছে কম মজুরি। যা নিয়েও বাজেটে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি। কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, ২০২০-২১ সালের থেকে ২০২১-২২ সালে রেগায় মজুরি বেড়েছে মাত্র চার শতাংশ। যদিও নোটিশে যে মজুরির কথা লেখা থাকে, তার থেকে অনেক কম হারে মজুরি মেলে। ২০২১-২২ সালে রেগায় নথিভুক্ত ৯১ লক্ষ পরিবারের কোনও কাজ মেলেনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন