বুলডোজার (Bulldozer) চালিয়ে 'সংবিধানের উপহাস’ করছে যোগী সরকার। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে হস্তক্ষেপ করার দাবি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনাকে চিঠি লিখলেন শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন বিচারপতিরা।
মঙ্গলবার, দেশের প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন তিন বিচারপতি জানিয়েছেন, ‘উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার দিয়ে যেভাবে প্রতিবাদকারীদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে, তা আইনের শাসনের একটি অগ্রহণযোগ্য বিপর্যয়। এই বিষয়ে আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।'
শীর্ষ আদালতকে লেখা চিঠিতে স্বাক্ষর রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডি (B Sudarshan Reddy), ভি গোপাল গৌড়া (V Gopala Gowda) এবং এ কে গাঙ্গুলী (AK Ganguly) সহ হাইকোর্টের ৩ জন প্রাক্তন বিচারপতি এবং ৬ জন আইনজীবীর।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবং ভারতের আইন কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপারসন বিচারপতি এ পি শাহ (Justice AP Shah), মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি কে চন্দ্রু (Justice K Chandru) এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার (Justice Mohammed Anwar)।
চিঠিতে কি জানিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতিসহ আইনজীবিরা ?
বহিষ্কৃত বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে দেশ। প্রভাব পড়েছে উত্তরপ্রদেশেও। সেই বিক্ষোভ দমানোর নামে বুলডোজার দিয়ে প্রয়াগরাজে মহম্মদ জাভেদ নামে এক বিক্ষোভকারীর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে যোগী প্রশাসন। এতে হিন্দুত্ববাদীদের একাংশ উৎসাহিত। অনেকেই খোলাখুলি বলছেন, 'ঠিক করেছে যোগী সরকার।'
তবে, উত্তর প্রদেশ প্রশাসনের এই পদক্ষেপ 'আইনসঙ্গত' নয় বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপরতিরা। চিঠিতে লেখা হয়েছে, 'পুলিশ এবং কানপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি যৌথভাবে যে ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়েছে, তা একটি বিচার বহির্ভূত শাস্তি।'
প্রাক্তন বিচারপরতিরা জানিয়েছেন, 'বিজেপি নেতানেত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানানোর প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের মুসলিমদের উপর হিংসা এবং নিপীড়ন চালাচ্ছে যোগী সরকার। নাগরিকদের রক্ষা করা দেশের শীর্ষ আদালতের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। যেভাবে নাগরিক অধিকার রক্ষায় স্পাইওয়্যার বা লকডাউনের সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরতে গিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে পড়া নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে শুনানি করেছিল শীর্ষ আদালত, এ ক্ষেত্রেও তেমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বুলডোজার দিয়ে যেভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে দমনের রাস্তায় হাঁটছে যোগী সরকার তা সংবিধান ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে উপহাস ছাড়া কিছু নয়।'
উল্লেখ্য, সোমবারই এই ইস্যুতে সরব হয়েছিলেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর। তিনি জানিয়েছিলেন, 'বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা বেআইনি। উত্তরপ্রদেশে আইনের শাসন ঠিক মতো পালন করা হচ্ছে না। এইভাবে একজনের বাড়ি কখনোই ভেঙে ফেলা উচিৎ নয়।'
প্রসঙ্গত, এই বুলডোজার বিতর্ক উত্তরপ্রদেশে নতুন নয়। এর আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের বাড়িও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে যোগী প্রশাসন। এছাড়াও দিল্লীতে বুলডোজার চালিয়ে বহু গরিব মানুষের দোকান, বাড়ি ভাঙা হয়েছে। উত্তর দিল্লীর বিজেপি শাসিত পুরনিগমের তরফ থেকে এমন ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে একাদিক জায়গায়। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লীর জাহাঙ্গীরপুরিতে আপাতত উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত আছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন