গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার আগেই আদালত চত্বর থেকে উধাও খোদ মন্ত্রী! এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল যোগী রাজ্য। ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারির খাঁড়া ঝুলছে।
সূত্রের খবর, এমন অবস্থায় মন্ত্রী রাকেশ সাচান দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর নিজের ফাইল নিয়ে আদালত চত্বর থেকে পালিয়েছেন। আরেক মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে গোরক্ষপুরের সিজেএম আদালত।
৩১ বছরের পুরনো একটি মামলায় মন্ত্রী রাকেশ সাচানকে অস্ত্র আইনে দোষী সাব্যস্ত করে কানপুর আদালত। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বিচারক শাস্তি ঘোষণা করার আগেই পলাতক মন্ত্রী। এক্ষেত্রে মন্ত্রীর আইনজীবীর মধ্যস্থতায় বিষয়টি ঘটেছে বলেই আদালত সূত্রের খবর। এই ঘটনার জেরে যথেষ্ট উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। আদালতের পেশকার মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে পুলিশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে কিনা, শনিবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি।
তবে সাচানের আইনজীবী জানান, রাকেশ অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে তাঁকে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে মন্ত্রীর বক্তব্য, তিনি জানতেনই না যে শনিবার রায় ঘোষণা হবে। রায়ের তারিখ পরে ঘোষণা হবে বলে তিনি চলে এসেছিলেন। তিনি আদালত থেকে পালিয়ে আসেননি বলেই দাবি করেছেন।
কানপুরের বাসিন্দা রাকেশ সাচান আগে সমাজবাদী পার্টিতে ছিলেন। পরে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯৯৩ ও ২০০২ সালে ঘাটামপুর কেন্দ্র থেকে সমাজবাদী পার্টির এবং ২০০৯ সালে ফতেহপুর কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের বিধায়ক হন। ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেন। ভোটে জিতে যোগীর মন্ত্রীসভার ক্ষুদ্র, মাঝারি, ছোট শিল্প এবং খাদি দপ্তরের মন্ত্রী হন।
অন্যদিকে, বিজেপি জোটের শরিক নিষাদ পার্টির প্রধান সঞ্জয় নিষাদও যথেষ্ট বিপাকে পড়েছেন বলে জানা গেছে। ২০১৫ সালে নিষাদদের সংরক্ষণের দাবিতে হিংসাত্মক আন্দোলন করার জন্য এবং জনগণকে উত্তপ্ত করে হিংসা ছড়ানোর কারণে সঞ্জয় নিষাদ সহ অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল বলেও অভিযোগ।
মূলত পুলিশের গুলিতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলন আরও হিংসাত্মক হয়ে ওঠে এবং বিক্ষোভকারীরা অনেকগুলি পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দেন। এই পুরো ঘটনাই মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদের উষ্কানিতে ঘটেছিল বলে সূত্রের খবর।
এই ঘটনার জেরে গোরক্ষপুরের সিজেএম আদালত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, দোষী প্রমাণিত হলে আদালত যে একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে রায় দিতে পারে এই ধারণাটাই এখন উঠে গেছে মোদী-যোগী রাজ্যে। সেই কারণেই মন্ত্রী এত বেপরোয়াভাবে আদালতে গিয়েছিলেন। আসলে তিনি ভাবতেই পারেননি যে আদালত এমন রায় দেবে। ক্ষমতার দম্ভে মন্ত্রী রায়ের কপি তুলে নিয়ে আদালত থেকে চলে আসেন। মন্ত্রী কোনও সাধারণ ব্যক্তি না, যে তিনি আদালত থেকে চলে এলেন আর কেউ জানতে পারল না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন