শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের একটি স্কুলের। যেখানে দেখা যাচ্ছে, আট বছর বয়সী এক মুসলিম ছাত্রকে থাপ্পড় মারার জন্য বাকি পড়ুয়াদের উৎসাহ দিচ্ছেন এক শিক্ষিকা।
৪০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষিকা চেয়ারে বসে রয়েছেন। নীচে অনেক পড়ুয়া বসে রয়েছেন। শিক্ষিকার পাশে মুসলিম ছাত্রটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাকে অন্য পড়ুয়ারা পর পর এসে মেরে যাচ্ছে। এমনকি, শিক্ষিকা এক ছাত্রকে তিরস্কারও করেন মুসলিম পড়ুয়াটিকে যথেষ্ট জোরে না মারার জন্য। এবং মুসলিম ছাত্রটি এক নাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে।
ভিডিওটি দেখে বোঝা যাচ্ছে সেটি গোপনে রেকর্ড করা হয়েছে (পিপলস রিপোর্টার এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি)। যিনি ভিডিওটি করছেন তাঁর সাথে কথা বলে যাচ্ছেন শিক্ষিকা। মুসলিম পড়ুয়াকে মারধরের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তিনি।
শিক্ষিকাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “আমি ঘোষণা করছি যতজন মুসলিম পড়ুয়া আছে তাদের সকলকে উচিত …”। স্পষ্টতই তিনি হিন্দু পড়ুয়াদের উৎসাহিত করছেন মুসলিম পড়ুয়াদের মারধর করার জন্য।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একজন পড়ুয়া, যে মুসলিম ছাত্রটিকে মেরেছে, তাকে শিক্ষিকা বলছেন, “আরে এটা তুমি কী করছো? জোরে মারো।“
জানা গেছে ওই শিক্ষিকার নাম তৃপ্তি ত্যাগী। নির্যাতিত পড়ুয়ার বাবা কৃষক। এর আগে, পড়ুয়াটির এক খুড়তুতো ভাইকেও স্কুলে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ কিভাবে শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ওই শিক্ষিকাকে গ্রেফতারের দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং শুরু হয়েছে। ডিএসপি রবিশঙ্কর মিডিয়াকে জানিয়েছেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে ওই ছাত্র গণিতের টেবিল মুখস্থ করে না আসার জন্য অন্য ছাত্রদের দ্বারা তাকে প্রহার করিয়েছেন ওই শিক্ষিকা।“
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, শশী থারুর এবং এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি সহ অনেকে। ওয়াইসি এক্স-এ লিখেছেন, “শিশুটির সাথে যা ঘটেছে তার জন্য যোগী আদিত্যনাথ দায়ী। সম্ভবত, আপনি অপরাধীকে (শিক্ষিকা) লখনউতে আমন্ত্রণ জানাবেন এবং তাকে পুরস্কৃত করবেন। কত মুসলিম শিশু নীরবে এমন অপমান সহ্য করতে বাধ্য হয়েছে তার হিসাব নেই। মুসলিম শিশুদের স্কুলে 'জিহাদি' বা 'পাকিস্তানি' বলাটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে এখন।“
কংগ্রেস নেতা শশী থারুর সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন: “এটি অবিশ্বাস্য। আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে এটি আমাদের দেশে ঘটছে এবং অভিযুক্তরা কারাগারে নেই।“
জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রধান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন