করোনা মোকাবিলায় যে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন, তাঁদেরই ৯ মাসেরও বেশি বেতন বন্ধ যোগী রাজ্যে। এবার বাধ্য হয়ে তাঁরা গণআত্মহত্যার ডাক দিয়েছেন। আগামী বুধবার (৩০ নভেম্বর), বস্তি জেলায় কমপক্ষে ২৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী একসঙ্গে আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়েছেন।
শুধু স্বাস্থ্যকর্মী নয়, একাধিক ল্যাব টেকনিশিয়ান এবং ডেটা এন্ট্রি অপারেটরও বেতন পায়নি গত ৯ মাস ধরে। তারাও এদিন গণআত্মহত্যার ডাক দিয়েছেন।
জানা যাচ্ছে, বস্তি জেলার বিভিন্ন কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিযুক্ত কর্মচারীরা একাধিকবার জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (এনএইচএম) দরজায় ঘুরেছেন বকেয়া বেতনের দাবিতে। তারা সিটি লাইভলিহুড সেন্টার (সিএলসি) এর সাথেও যোগাযোগ করেছেন। জেলা শাসককে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু, মৌখিক আশ্বাস ছাড়া কিছুই জোটেনি তাঁদের।
সরাসরি রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মী না হলেও এই কর্মীদের মাইনের দায়িত্ব যোগী সরকারেরই। চুক্তির ভিত্তিতে একটি কোম্পানির অধীনে থেকে কাজ করেন তাঁরা। সেই কোম্পানির ম্যানেজারও জানিয়েছেন, সরকার টাকা না দেওয়ার জন্যই কর্মীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বস্তির বিভিন্ন কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করেন এই কর্মীরা। তাঁদেরই একজন পেশায় ল্যাব টেকনিশিয়ান বিবেককুমার পান্ডে জানান, 'এখন আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। যদি সোমবারও আমরা বেতন না পাই, তাহলে বুধবার ২৬জন মিলে আত্মহত্যা করব। জেলা শাসকের কাছে গিয়েছিলাম। এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাও হয়নি। ঠিক সময়মতো কর্মীদের বেতন দেওয়া কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। তাতে কর্মীরা কাজে উৎসাহ পান। আমরা আর কাজ করার পরিস্থিতিতেই নেই।'
মার্চ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মাইনে পাননি এই কর্মীরা। সুরজ কুমার পান্ডে নামে আরেকজন বলেন, 'স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রয়োজনে আমরা সবসময়ই কাজ করতে রাজি। কিন্তু এতগুলো মাস বিনা বেতনে আমরা খিদের জ্বালায় জ্বলছি। কাজ করার অবস্থাতেই নেই।'
সময়মতো সঠিক বেতনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন ল্যাব টেকনিশিয়ান এবং ডেটা অপারেটররা। রাগিনি ত্রিপাঠি নামে এক ডেটা অপারেটরের জানান, 'আমরা মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পাই। তাও সময়ে দেওয়া হয় না। আমরা স্থায়ী পদে চাকরির জন্য নির্বাচিত হলেও নিয়োগ হয়নি। তাহলে আমাদের বেতন মাসে ৩৫ হাজার হয়ে যেত। যেখানে সম্মানই নেই সেখানে কাজ করব কী করে?'
স্বাস্থ্য কর্মীদের বক্তব্য, 'গণআত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভাবিইনি। দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের দাবি সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরে নজরে আনার চেষ্টা করতে হচ্ছে। বিজেপি সরকারের উদাসীনতাতেই এই অবস্থা।'
জেলা শাসকের কাছে একটি চিঠি দিয়ে নিজেদের দুরবস্থার কথা তুলেছেন ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য কর্মীরা। তাঁরা বলেছেন, প্রচুর আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। পরিবারকেও কোনও সাহায্য করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় তাঁদের পক্ষে কাজ করা দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। তারপরও উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন