পরিযায়ী শ্রমিকদের সাইকেল বিক্রির টাকা ঢুকছে যোগী সরকারের ঘরে। উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে এমনটাই ঘটেছে বলে অভিযোগ।
কোভিড পরিস্থিতিতে মাত্র ৪ ঘণ্টার নোটিশে সারা দেশ জুড়ে লকডাউন জারি করেছিল মোদী সরকার। যার ফলে গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের জন্য থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা আটকে পড়ে। কোভিড পরিস্থিতিতে ঘরে ফেরার কোনোরকম বন্দোবস্ত ছিল না শ্রমিকদের জন্য। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরাকেই একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিল হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। ভিনরাজ্য থেকে পায়ে হেঁটে বা কখনও ট্রাকে চড়ে বা কখনও সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরেছে বহু পরিযায়ী শ্রমিক।
পরিযায়ী শ্রমিকদের সাইকেল আটক করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে। সেই সাইকেল বিক্রি করেই নিজেদের কোষাগার ভরছে বলেই অভিযোগ উঠছে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, এই সাইকেল বিক্রি করে মুনাফা পাচ্ছে বেশকিছু ঠিকাদাররাও।
করোনা পরিস্থিতিতে হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড বা হিমাচলপ্রদেশ থেকে সাইকেলে চড়ে ঘরে ফেরে বহু পরিযায়ী শ্রমিক। সূত্রের খবর অনুযায়ী, তারপরই প্রায় ৫৪০০ সাইকেল সরকারের তরফে নিলামে তোলা হয় এবং সেখান থেকে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা সাহারানপুর জেলা প্রশাসনের ঘরে ঢোকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, লকডাউনের সময় গুরগাঁওতে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে আটকে পড়েছিল এক পরিযায়ী শ্রমিক। যার নাম জ্যোতি কুমারী। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। ঘরে ফেরার কোনও সুযোগ না পাওয়ায় গুরগাঁও থেকে ১১০০ কিমি সাইকেল চালিয়ে বিহারের দারভাঙা গ্রামে ফিরেছিল জ্যোতি। এই ঘটনার পর জ্যোতি কুমারীকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী "প্রধানমন্ত্রী বাল পুরস্কার" দিয়েছিলেন।
করোনা পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানা সীমান্তে আটকে দেওয়ার জন্য কড়া নির্দেশ জারি করেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। সেই নির্দেশ মেনেই আটকে থাকা শ্রমিকদের ক্লোরিন জলে ধুয়ে পিলখনি রাধা সৎসঙ্গ কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়। ওই জায়গাতেই প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক নিজেদের সাইকেল ফেলে রেখে বাড়ি চলে যান। তাঁদের মধ্যে ১৪,৬০০ শ্রমিক তাঁদের সাইকেল ফেরত নিয়ে গিয়েছিলেন।
সদর তহশিলদার নীতিন রাজপুতের বক্তব্য, প্রায় ১১ হাজার সাইকেল পড়েছিল সেখানে। যার মধ্যে ৫৪০০ শ্রমিক সাইকেল নিতেই আসেনি। সেগুলিকে একটা নির্দিষ্ট প্লটে রাখা হয়। পরে সেগুলি 'দাবিদারহীন' ঘোষণা করে নিলামে তোলে সরকার।
এ প্রসঙ্গে সদর মহকুমা শাসক কিংশুক শ্রীবাস্তব জানান, নিলাম থেকে সব মিলিয়ে ২১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এসেছিল। জেলা প্রশাসনের তরফে নিলামের ঘোষণা শুনে ২৫০ ঠিকাদার তাতে অংশ নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ২১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দর ওঠে। সরকারী হারে প্রতিটি সাইকেলের দাম ছিল ৩৯২ টাকা। কিন্তু সেগুলোই আবার ঠিকাদাররা ১২০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি করেছে। এর জন্য শহর জুড়ে ফেস্টুন ছাপানো হয়েছিল।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে CPI(M) নেতা সুরেন্দ্র কুমার বলেন, মোদী সরকারের আচমকা ঘোষিত লকডাউনে প্রতি ঘণ্টায় আয় বেড়েছে আদানি-আম্বানীদের। বড়লোকরা আরও বড়লোক হয়েছে। গরীবের রুজি গেছে। দু'বছর পরেও সেই মুনাফার কারবার চলছে। তবে প্রধানমন্ত্রী সবরকমের দায় বিরোধীদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। গেরুয়া শিবিরের দাবি, পেটের দায়ে ভিনরাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার জন্য বিরোধী দলের নেতারাই উস্কে দিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন