ক্রমাগত খারাপ হচ্ছে দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি। গত সপ্তাহে এনিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় কেন্দ্র সরকারকে। এহেন পরিস্থিতিতে দিল্লি এনসিআর নয়ডায় বাড়তে থাকা বায়ু দূষণের জন্য এবার পাকিস্তানকে দায়ী করল উত্তরপ্রদেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। উত্তরপ্রদেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আঞ্চলিক আধিকারিক ডিকে গুপ্তার দাবি, পাকিস্তানে শস্য পোড়ানোর জন্যই গাজিয়াবাদ, নয়ডা, গ্রেটার নয়ডার বাতাস দূষিত হচ্ছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন করতেই এক সংবাদ সংস্থাকে ডিকে গুপ্তা বলেন, “চলতি বছরে এই প্রথম বার নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা এবং গাজিয়াবাদে একই দিনে বাতাসের গুণগত মান ‘খুব খারাপ’। এর জন্য পাকিস্তানই দায়ী। সীমান্তের ও পারে শস্যের গোড়া পোড়ানো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখান থেকে দূষিত ধোঁয়া সীমান্তের এ পারে চলে আসছে।”
গ্রেটার নয়ডা, দিল্লি বা গাজিয়াবাদ থেকে নিকটতম পাকিস্তান সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। এতো দূর থেকে আসা ধোঁয়ার কারণে নয়ডার বাতাস দূষিত হচ্ছে, ডিকে গুপ্তার এহেন যুক্তি উড়িয়ে দিচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল। তাদের দাবি, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার গ্রামাঞ্চলে কৃষি বর্জ্য জ্বালানোর ফলেই দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বায়ু দূষণ বাড়ছে। সরকারি দূষণ মোকাবিলা আধিকারিকদের দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন মেনে কৃষি বর্জ্য জ্বালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা। তবে গত কয়েক বছরে এই কাজে চূড়ান্ত গাফিলতি লক্ষ্য করা গেছে।
রবিবার উত্তরপ্রদেশের তিন শহরেই বায়ুর গুণগত মানের সূচক একিউআই ‘খুব খারাপ’ ছিল। নয়ডায় একিউআই ছিল ৩০৪, গ্রেটার নয়ডায় ছিল ৩১২ এবং গাজিয়াবাদে ছিল ৩২৪। দিল্লিতে রবিবার একিউআই ছিল ৩৫২। যদিও সোমবার সকালে তিন শহরে বায়ুর গুণগত মান কিছুটা উন্নত হয়েছিল। এদিন নয়ডায় একিউআই ছিল ২৬৭, গ্রেটার নয়ডায় ২৪৮ এবং গাজিয়াবাদে ২৫২। দিল্লিতে সোমবার সকালে একিউআই ছিল ৩২৮।
দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বায়ু দূষণের ফলে বাড়ছে শ্বাসঘটিত রোগের আশঙ্কা। তার উপর সামনেই দীপাবলি। ফলে বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ার আরও সম্ভাবনা রয়েছে। গত সপ্তাহেই একাধিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন রক্ষায় চূড়ান্ত গাফিলতির জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়েছিল কেন্দ্র সরকার। শীর্ষ আদালত মনে করছে, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় শস্যের গোড়া পোড়ানোর জন্য বাতাসের গুণগত মান খারাপ হচ্ছে।
যদিও কেন্দ্রের আইনজীবী আদালতে আশ্বস্ত করেছিলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে নিয়মবিধি চূড়ান্ত করে আইনও সম্পূর্ণ কার্যকর করা হবে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা উভয় রাজ্যেরই পরিবেশ সচিব এবং কৃষি দফতরের অতিরিক্ত সচিবকে শোকজ করা হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, এই প্রথম নয়, এর আগেও দূষণের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে এক শুনানিতে যোগী সরকার জানিয়েছিল, পাকিস্তান থেকে দূষিত বাতাস ঢোকার ফলেই ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন