হোটেলটি হিন্দু নামে আর সেখানে ধোসা বিক্রি করেন এক মুসলমান! এই অজুহাতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কর্মীদের তান্ডব। গত ১৮ আগস্টের এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিল অভিযুক্ত দেবরাজ পন্ডিত ওরফে প্রকাশ শর্মা। আক্রান্তের নাম ইরফান। ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের মথুরার বিকাশ মার্কেটের। সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেছে বলে জানিয়েছেন শহরের সার্কেল অফিসার বরুণ কুমার। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করা হবে।
ওইদিন দেবরাজ পণ্ডিত ওই ধোসা বিক্রেতা ইরফানের উপরে হামলা চালায়। সোশ্যাল মিডিয়া মারফৎ এইরকম একটা ভিডিও পুলিশের নজরে আসার পরে শনিবার মথুরা কোতওয়ালি থানায় এফআইআর দায়ের হয়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মুসলিম ধোসা বিক্রেতা ইরফানকে মারধর করছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের লোকেরা। তাকে মারার কারণ, দোকানের নাম শ্রীনাথ ধোসা কর্নার। কেন তিনি মুসলিম নাম দেননি দোকানের, এটাই তাঁর অপরাধ। হিন্দুরা বুঝতে না পেরে দোকানে খেতে এসে একজন মুসলিমের থেকে খাবার খাচ্ছে।
ইরফান জানান, 'হঠাৎই কয়েকজন আমার দোকানে এসে বলে শ্রীনাথ হিন্দু ভগবানের নাম। তোমাকে এই দোকানের মুসলিম নাম দিতে হবে।' তিনি বলার চেষ্টা করেন, আল্লা আর ভগবান একই বলে তিনি মনে করেন। সে কথা পাত্তা দেয়নি অভিযুক্তরা।
অভিযুক্ত দেবরাজ লেখে, 'আজ আমরা এক কাটমুল্লাকে শিক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। যে আমাদের মথুরায় ভগবানের নামে দোকান চালাচ্ছে।' সকলে সোশাল মিডিয়ায় ওই দোকানিকে আক্রমণ করার জন্যেও উসকানি দেয় দেবরাজ পণ্ডিত।পরদিন ১৯ আগস্ট আর একটি ভিডিও পোস্ট করে দেবরাজ পণ্ডিত। সেখানে দেখা যায় চিকেন বিরিয়ানি বিক্রেতা এক দোকানিকে শাসাচ্ছে এক দল হিন্দুত্ববাদী।
আসলে ধোসার স্টলটি ইরফানের নয়। তিনি একজন কর্মী। চার বছর ধরে তিনি এখানে কাজ করেন। কয়েক বছর আগে ইরফানের দাদার থেকে স্টলটি কিনেছিলেন রাহুল ঠাকুর নামে এক ব্যক্তি। তিনিই এই দোকানের মালিক। ইরফান তাঁর কাছে ৪০০ টাকা রোজে কাজ করেন। কাজ হারানোর ভয়ে আছেন ইরফান। বলেন, 'এখানে আরও দুইজন কাজ করে। কিন্তু আমি মুসলিম বলে দোকানের উপরে হামলা হয়েছে। কাজ হারালে পেট চলবে কী করে জানি না। দাদা আর আমিই পরিবারে উপার্জন করি।' এই অবস্থায় অপরাধীদের শাস্তি চান ইরফান।
রাষ্ট্রীয় যুব হিন্দু বাহিনীর কর্মী দেবরাজ পণ্ডিত এফআইআরকে পাত্তা না দিয়ে রবিবার ফেসবুক পোস্ট করে ফের হুমকি দিয়ে বলেছে, ‘পুণ্য নগরী মথুরা’য় একটাও চিকেনের দোকান চালাতে দেব না।' এই কাজের জন্য সনাতন ভাইদের থেকে এবং পুলিশ প্রশাসনের থেকে সমর্থনও পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হিন্দুত্ববাদীর এই ধ্বজাধারীরা।
রবিবার সকালেই রাষ্ট্রীয় বজরং দল ভিডিও-তে দেবরাজ পণ্ডিতের কাজকে সমর্থন জানিয়েছে।
এই ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন ক্ষেত্র বারাণসী থেকে অমিত শাহের হাতে থাকা দিল্লি পুলিশের এলাকার মধ্যেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মধ্যপ্রদেশে হিন্দু এলাকায় চুড়ি বিক্রি করায়, এক চুড়ি বিক্রেতার উপরে হামলা হয়। এরপরে এক মুসলিম টোস্ট বিক্রেতাকেও মারধর করা হয় মধ্য প্রদেশে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন