তিন দিন আগে (৯ নভেম্বর) যোগগুরু রামদেবের পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ কোম্পানির তৈরি ৫টি ওষুধের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল উত্তরাখণ্ডের আয়ুর্বেদ এবং ইউনানী লাইসেন্সিং অথরিটি (Ayurveda and Unani Licensing Authority)।
বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষকে ভুল বোঝানো এবং স্বীকৃতি ছাড়াই ওষুধ বিক্রির অভিযোগে রামদেবের ওষুধের উৎপাদন বন্ধের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল লাইসেন্সিং অথরিটি।
একইসঙ্গে, রামদেবের (Ramdev) সংস্থাকে জানানো হয়, এই ওষুধগুলির জন্য নতুন করে তাঁদের অনুমোদন নিতে হবে। পতঞ্জলিকে সংশোধিত ফর্মুলেশন শীট এবং লেবেল জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। এমনকী ওই ওষুধগুলির বিজ্ঞাপনও দ্রুত বন্ধ করতে বলা হয়েছিল। নতুন করে অনুমোদন মিললে, তারপরেই বিজ্ঞাপন প্রচার এবং উৎপাদন করা যাবে।
তবে শনিবার, সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে লাইসেন্সিং অথরিটি। অথরিটি জানিয়েছে এই আদেশটি ভুল ছিল (the order was a mistake)।
শুধু তাই নয়, লাইসেন্সিং অথরিটি এক চিঠিতে পতঞ্জলির ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি দিভ্যা ফার্মেসিকে (Divya Pharmacy) জানিয়েছে, কোম্পানিটি ওই পাঁচটি ওষুধের - মুধুগ্রিট (Madhugrit), আইগ্রিট (Eyegrit), থাইরোগ্রিট (Thyrogrit), বিপিগ্রিট (BPgrit) এবং লিপিডোম (Lipidom) - উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারবে।
এর আগে, ১০ নভেম্বর, এই নিষেধাজ্ঞার জন্য 'আয়ুর্বেদ-বিরোধী ড্রাগ মাফিয়া' চক্রকে (Anti-Ayurveda drug mafia) দায়ী করে দিব্যা ফার্মেসি।
এরপর, দেরাদুনের আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি লাইসেন্সিং অথরিটির সংশ্লিষ্ট অফিসারকে শোকজ নোটিশ ধরায় বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ড সরকার।
তারপরেই, ১২ নভেম্বর, পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ কোম্পানির তৈরি ৫টি ওষুধের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি লাইসেন্সিং অথরিটি। কিন্তু, নতুন চিঠিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার কারণের বিস্তারিত উল্লেখ নেই।
জানা যাচ্ছে, ৯ নভেম্বরের নিষেধাজ্ঞার আদেশ এবং ১২ নভেম্বর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চিঠিতে লাইসেন্সিং অথরিটির অফিসার হিসাবে জি সি এন জাংপানি (G.C.N. Jangpani)-র স্বাক্ষর রয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাই মাসে কেরালার চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ কে ভি বাবু পতঞ্জলির তৈরি এই পাঁচটি ওষুধের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ দায়ের করেন। ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স অ্যাক্ট, ১৯৪০ এবং ম্যাজিক রেমেডিস, ১৯৫৪ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন তিনি। এই আইনে রক্তচাপ, গ্লুকোমা, ডায়াবেটিস, লিভার প্রবলেম, হৃদরোগ, গলগণ্ড সহ নির্দিষ্ট কিছু রোগের প্রতিরোধ বা নিরাময়ের বিজ্ঞাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির উল্লেখ রয়েছে।
বাবুর দায়ের করা অভিযোগের পর দীর্ঘ কয়েকমাস কেটে গেলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। এরপর গত ১১ অক্টোবর ফের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে স্টেট লাইসেন্সিং অথরিটিকে মেইল করেন তিনি। এরপরই ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। উৎপাদন বন্ধের নোটিশ দেয় অথরিটি। কিন্তু, সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩ দিনও কাটল না।
ফলে, স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিজেপি সরকারের চাপেই কি রামদেবের ৫ টি ওষুধের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে? কারণ রামদেব যে বিজেপি-আরএসএস ঘনিষ্ঠ একথা সর্বজন বিদিত। বিজেপি সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে প্রায়শই দেখা যায় রামদেবকে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন