দেশের জাতিভেদ যে আজও শীর্ষে বিরাজ করে, তা ফের প্রমাণ হল উত্তরাখণ্ডে। এতদিন শোনা গিয়েছিল, দলিত রাঁধুনির হাতে তৈরি রান্না খাবে না উচ্চবর্ণের পড়ুয়ারা। তার পাল্টা এবার উচ্চবর্ণের রাঁধুনির হাতে তৈরি রান্না খাবে না বলে দাবি জানাল দলিত পড়ুয়ারা।
কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল রান্নার দায়িত্বে একজন দলিত মহিলার থাকা ‘অনাচার’ বলে মনে হয়েছিল 'উচ্চবর্ণের’ একদল পড়ুয়ার। স্কুলের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৫৭ জন পড়ুয়ার মধ্যে গত কয়েক দিন বিদ্যালয়ের খাবার খাচ্ছিল মাত্র ১৬ জন তফশিলি পড়ুয়া। বাকি উচ্চবর্ণের পড়ুয়ারা বাড়ি থেকে খাবার আনছিল। এই ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়ে। ‘উচ্চবর্ণের’ অভিভাবকদের প্রভাবে ২১ ডিসেম্বর ওই দলিত রাঁধুনিকে টিবরখাস্ত করে ‘উচ্চবর্ণের’ মহিলাকে নিয়োগ করা হয়।
উত্তরাখণ্ডের চম্পাবত জেলার সুখিধঙ্গের জৌল গ্রামের একটি বিদ্যালয়ের ঘটনা। প্রতিবাদে শামিল হয় বিদ্যালয়ের দলিত সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা। এইভাবে দলিল সম্প্রদায়কে অপমান করার কোনও অধিকার নেই। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার তারা সিদ্ধান্ত নেয়, নতুন ‘উচ্চবর্ণের’ রাঁধুনির হাতের রান্না তারা খাবে না।
বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক প্রেম সিংহ জানিয়েছেন, গত শুক্রবার ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির ২৩ জন দলিত পড়ুয়া জানায় তারা নতুন রাঁধুনির হাতের রান্না খাবে না। ঘটনায় চম্পাবত জেলার মুখ্য শিক্ষা আধিকারিক জানিয়েছেন, স্কুলে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া ওই দলিত রাঁধুনি সুনীতা দেবীকে পরিচালন সমিতি ও অভিভাবকদের একাংশের সামনেই ইন্টারভিউ নিয়ে নিয়োগ করা হয়েছিল বলে খবর। যদিও অভিভাবকদের একাংশের দাবি ছিল, অন্যায্য ভাবে ‘উচ্চবর্ণের’ প্রার্থীকে বাতিল করা হয়েছে।
দেশের বড় অংশের নাগরিকদের দাবি, পড়ুয়াদের বোঝানোর বদলে কীভাবে সুনীতা দেবীকে বরখাস্ত করল কর্তৃপক্ষ! পাল্টা ‘যুক্তি’ হিসাবে কর্তৃপক্ষের দাবি, সুনীতা দেবীর নিয়োগ পদ্ধতি ঠিক ছিল না। তাই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রবিবার জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, স্কুল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ আলোচনার পর দলিত পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা নতুন রাঁধুনিকে মেনে নিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন