৫ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গিয়েছে। জোর কদমে চলছে নির্বাচনী প্রচার। এরই মাঝে অসম, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু এবং কেরল ও পুদুচেরিতে নির্বাচনী প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলো প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করেছে। অর্থ বরাদ্দের খাতিরে সবথেকে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। সাম্প্রতিক সময়ে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তহবিলে প্রচুর টাকা ঢুকছে। তথ্য ও পরিসংখ্যান অনুসারে ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে সবথেকে বেশি টাকা ঢুকেছে বিজেপির তহবিলে।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে ১৪ দফায় এসবিআই থেকে ইলেক্টোরাল বন্ড বিক্রি হয়েছে ৬,৪৯২.৬৮ কোটি টাকার। ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত এসবিআই বিক্রি করেছে মোট ১২,৭৭৩টি ইলেক্টোরাল বন্ড। যার মধ্যে ১২,৬৩২টি ইলেক্টোরাল বন্ড ভাঙানো হয়েছে। যার মোট মূল্য ৬,৪৭২.৪৩ কোটি টাকা। এই তথ্য জানা গেছিলো অবসরপ্রাপ্ত কম্যান্ডার লোকেশ কে বাটরার করা এক আরটিআই-এর উত্তরে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে।
ইলেক্টোরাল বন্ড সবথেকে বেশি বিক্রি হয়েছে মুম্বাই থেকে, ৩১.১৬ শতাংশ, কলকাতায় ২২.৯৮ শতাংশ এবং নিউদিল্লিতে ১৪.৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে ১ কোটি টাকা মূল্যের বন্ড বিক্রি হয়েছে ৫,৯৮১টি, ১০ লাখ টাকা মূল্যের ৪,৯৪৩টি এবং ১ লাখ টাকা মূল্যের ১,৭৩১টি। এছাড়াও ১০ হাজার এবং ১ হাজার টাকার মূল্যের বন্ডও অল্প পরিমাণে বিক্রি হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপির তহবিলে ঢুকেছিলো ২,৪১০ কোটি টাকা। এর আগে ইলেক্টোরাল বন্ড বাবদ প্রাপ্ত মোট টাকার প্রায় ৯৫ শতাংশই ঢুকেছিলো বিজেপির তহবিলে।
ইলেক্টোরাল বন্ডে অস্বচ্ছতার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে এডিআর বা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস-এর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যে মামলার শুনানি হয়নি। ইতিমধ্যেই এই মামলার জরুরি শুনানি চেয়ে এডিআর-এর পক্ষ থেকে আরও একটি আবেদন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর নির্বাচনী ধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী প্রচারে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে থাকে ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করার জন্য। কোনও প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারের খরচ বেধে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেই বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই নির্বাচনী প্রচারে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিজেপি বর্তমান এই পরিস্থিতির সবথেকে বেশি সুবিধা নিচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারের সব নিয়ম ভেঙেই কর্পোরেটদের কাছে থেকে অর্থ বরাদ্দ করা থেকে পিছপা হচ্ছে না। প্রচুর অর্থ কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, পুদুচেরি থেকে কংগ্রেস বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিয়ে আসায়, সেখানকার কংগ্রেস সরকারের ভাঙন দেখা দিয়েছে।
একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। অর্থের জোর কাজে লাগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘরেও ভাঙন ধরাতে শুরু করেছে বিজেপি। শুধু কর্পোরেটরাই নয়, বেশ কিছু আইন পরিবর্তন করে বড় বড় শিল্প সংস্থা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোতে টাকা নিয়ে আসা হচ্ছে। বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার কারণে এই সংস্থাগুলোকেও বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকার ফরেন কন্ট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট সংশোধন করে বিদেশি কোম্পানিগুলো থেকে টাকা আনার ব্যবস্থা করছে। যে টাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুদানের মাধ্যমে ঢুকছে।
আবার কোম্পানি আইনে পরিবর্তন এনে বার্ষিক আয়ের পরিমাণ থেকে ৭.৫ শতাংশ হারে টাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুদান হিসেবে দিতে হচ্ছে। আয়কর-এ পরিবর্তন এনেও এক অংশের টাকা রাজনৈতিক দলগুলোর অনুদানে পাঠানো হচ্ছে। যদিও এই তথ্য পরে মুছে দেওয়া হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন