আদালত থেকে তথ্য গোপন এবং আদালত অবমাননার দায়ে বিজয় মালিয়ার জরিমানা ঘোষণা করলো সুপ্রিম কোর্ট। তবে ৯ হাজার কোটির জালিয়াতিতে অভিযুক্ত মালিয়ার মাত্র ২০০০ টাকা জরিমানা করেছে শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি চার মাসের কারাদণ্ডাদেশও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ২০১৭ সালের একটি ঘটনায় সোমবার শীর্ষ আদালত এই রায় ঘোষণা করেছে।
সোমবার আদালতের তরফে আরও বলা হয়েছে, পলাতক ব্যবসায়ী বিজয় মালিয়া যদি সময়মতো জরিমানা না দেয় তাহলে তাঁকে আরও দু'মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্দেশ অমান্য করে নিজের সন্তানদের প্রায় ৩১৭ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, কিংফিশার এয়ারলাইন্সের সাথে জড়িত থাকাকালীন প্রায় ৯,০০০ কোটিরও বেশি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ খেলাপির মামলায় জড়িয়েছিলেন বিজয় মালিয়া। সেই ঋণ পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। আদালতের সেই নির্দেশও অমান্য করেছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের তরফে বহুবার নির্দেশ আসা স্বত্ত্বেও বিজয় মালিয়ার তরফে কোনওরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এমনকি আদালতের নির্দেশ অমান্য করার পরেও বিজয় মালিয়ার মধ্যে কোনও অনুশোচনা দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে বিচারকরা জানিয়েছেন, "ন্যায়বিচারের মহিমা অক্ষুণ্ণ রাখতে, আমাদের অবশ্যই পর্যাপ্ত শাস্তি দিতে হবে।"
দেশের শীর্ষ আদালত আরও জানিয়েছে, বিজয় মালিয়াকে তাঁর প্রাপকদের আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে ৪% সুদের সাথে যাবতীয় অর্থ ফেরত দিতে হবে। টাকা না ফেরত দিলে মালিয়ার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিচারপতি ইউইউ ললিত, এস রবীন্দ্র ভাট এবং পিএস নরসিমার বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছে।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)-র নেতৃত্বে ব্যাঙ্কগুলির কনসোর্টিয়াম বিজয় মালিয়ার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন জানায়। এছাড়াও অফশোর ফার্ম ডিয়াজিও থেকে প্রাপ্ত ৪০ মিলিয়ন অর্থ জমা করার জন্য বিজয় মালিয়াকে নির্দেশ দেওয়ার আবেদনও করেছিল কনসোর্টিয়াম। ব্যাঙ্কগুলির অভিযোগ, বিজয় মালিয়া তথ্যগুলি গোপন করেছেন এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের "প্রকাশ্য লঙ্ঘন" করে তাঁর ছেলে সিদ্ধার্থ মালিয়া এবং কন্যা লিয়ানা মালিয়া এবং তানিয়া মাল্যের কাছে টাকা সরিয়ে রেখেছেন।
১০ মার্চ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট বিজয় মালিয়ার সাজা দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছিল। কারণ, বিজয় মালিয়া ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। মালিয়ার যুক্তরাজ্যে পালিয়ে আসার পর এই মামলার শুনানি শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সরকার আগেই সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল, যুক্তরাজ্য বিজয় মালিয়াকে এদেশে ফেরার অনুমতি দিলেও সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু 'গোপন' কর্মকাণ্ড চলার কারণে তাঁকে ভারতে আনা যাবে না। এর কোনও বিশদ বিবরণ কেন্দ্রের জানা নেই।
আদালত বিজয় মালিয়াকে হাজির হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য কয়েকবার শুনানি পিছিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাজির হতে অস্বীকার করার কারণে তাঁর অনুপস্থিতিতেই এই মামলার শুনানি এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 'অনুপস্থিত' শুনানিতে আদালতকে সহায়তা করার জন্য এই মামলায় সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়দীপ গুপ্তকে অ্যামিকাস কিউরি হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন