সময় যত এগোচ্ছে ওয়েনাডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃত ২৭৬ জন এবং এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ ২৪০ জন। এছাড়াও আহত এবং গুরুতর আহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। যারা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ও চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি আছেন। ৮২টি ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে স্থানীয় ৮,৩০২ জনকে। আজই ওয়েনাড যাবেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। যদিও চরম এই বিপর্যয়ের মধ্যেও শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। যে বিতর্কের আঁচ নয়াদিল্লীতে সংসদের অধিবেশন থেকে শুরু করে পৌঁছে গেছে কেরালা পর্যন্ত।
ওয়েনাডের প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর এক বক্তব্যে। বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যসভায় জানান কেরালা সরকারকে এই বিপর্যয়ের বিষয়ে ২৩ জুলাই সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এরপর টানা তিনদিন এবং ২৬ জুলাইও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল এর ফলে ভূমিধসের ঘটনা ঘটতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর বিজেপি নেতা ভি মুরলীধরণ কেরালার পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বাধীন বাম সরকারকে আক্রমণ করেন। এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে মুরলীধরণ বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় স্পষ্ট করে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার কেরালার মানুষের পাশে আছেন এবং এই কথার নড়চড় হবেনা।
এরপরেই বিজেপি নেতা বলেন, আমি কাউকে দোষ দিতে চাইছি না। কিন্তু অমিত শাহ আরও জানিয়েছেন, জুলাইয়ের ২৩, ২৪, ২৫ এবং ২৬ তারিখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল এবং কেরালা সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। আগেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৯টি দলকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেরালা সরকার সেই সতর্কবার্তায় যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি।
যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের উত্তরে গতকালই এক সাংবাদিক সম্মেলনে কেরালার বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানান, এখন পারস্পরিক দোষারোপের সময় নয়। যদিও রাজ্যসভার রিপোর্ট বলছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন তিনি সতর্ক বার্তা জারি করেছিলেন এবং কেরালা সরকার তাতে গুরুত্ব দেয়নি। তিনি আরও বলেন, আমাদের রাজ্য এমন বেদনাদায়ক দৃশ্য এর আগে কখনও দেখেনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বিজয়ন খুব স্পষ্ট ভাষায় জানান, ওয়েনাডে ধসের সম্ভাবনা নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কেরলকে কোনও সতর্কবার্তা পাঠানো হয়নি। যদিও মঙ্গলবার ধসের পর এক লাল সতর্কতা জারি করা হয়।
বিজয়ন আরও জানান, ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) ভূমিধসের আগে শুধুমাত্র ওই জেলার জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছিল। যদিও, ওয়েনাডে ৫০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা IMD-র পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, দুদিনের উদ্ধারকাজে এখনও পর্যন্ত বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ১,৫৯২ জনকে উদ্ধার করেছে। প্রসঙ্গত, কেরালার বিপর্যয় নিয়ে আজই রাজ্যে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
মঙ্গলবার সকালে কেরালার ওয়েনাডে দুটি বিশাল ভূমিধসের পর, এই অঞ্চল প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রথম ভূমিধসের ঘটনা ঘটে মুন্ডাক্কাই শহরে এবং দ্বিতীয়টি চুরমালায়। বিশাল ভূমিধস এই অঞ্চলে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, বাড়িঘর ও রাস্তার ক্ষতি করেছে, গাছ উপড়ে পড়েছে এবং জলাশয় উপচে গেছে। যা উদ্ধার অভিযানে বাধা সৃষ্টি করেছে। এখনও পর্যন্ত এই অঞ্চলে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, কেরলের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা এবং স্থানীয় জনসাধারণ ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন।
মঙ্গলবারের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর বৃহস্পতিবার সকালে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে প্রবল এই ভূমিধস এবং জলোচ্ছ্বাসে কমপক্ষে চারটি গ্রাম কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এই অঞ্চলের কফির বাগান, ঘরবাড়ি চাপা পড়ে গেছে পাথর এবং কাদার স্তূপের নিচে। এর মধ্যেই রাজ্যের ৯টি জেলায় নতুন করে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ১০টি জেলার স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার কেরালায় আরও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন