২০১৭ সালে দুর্ঘটনা এড়াতে রেল জানিয়েছিল পুরনো প্রযুক্তির সমস্ত কামরা তৈরি পুরোপুরি বন্ধ করে নতুন প্রযুক্তির কামরা লাগানো হবে। সেই সিদ্ধান্তের পর কেটে গেছে প্রায় সাত বছর। কিন্তু রেলের কামরার পরিবর্তন হয়নি। আর যার পরিণতি সোমবার উত্তরবঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রতিশ্রুতি মানলে কী এড়ানো যেত দুর্ঘটনা? দুর্ঘটনার পর উঠতে শুরু করেছে একাধিক প্রশ্ন।
এবিষয়ে রেলের এক প্রাক্তন কর্তা জানিয়েছেন, রেল প্রতিশ্রুতি রাখলে হয়ত ঘটত না এত বড়ো দুর্ঘটনা। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রেলমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার মধ্যে অন্যতম ছিল নতুন প্রযুক্তির কামরা। রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, পুরনো প্রযুক্তির কামরা তৈরি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ওই ধরনের বগি তৈরি হত চেন্নাইয়ের ‘ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি’তে।
রেল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালে জানিয়ে দেয়, এখন থেকে দেশের সব ট্রেনেই ধীরে ধীরে পুরনো আইসিএফ কামরা পাল্টে এলএইচবি (লিঙ্ক হফম্যান বুশ) প্রযুক্তির উন্নত কামরা লাগানো হবে। কী এই এলএইচবি কামরা? জানা যাচ্ছে, জার্মানির লিঙ্ক হফম্যান বুশ দিয়ে তৈরি এই কামরা। আরও জানা যাচ্ছে, হাওয়ার সাথে গতির বৃদ্ধি হলেও ভারসাম্য পরিবর্তন হয় এই কামরার।
এই বিষয়ে ওই প্রাক্তন রেল কর্তা জানিয়েছেন, “সামনাসামনি দুই ট্রেনের ধাক্কা লাগলে একটি কামরা আর একটি কামরায় ঢুকে যাবে না। এমনকি, একটি কামরা আর একটির উপরে উঠেও যাবে না। ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে গেলে কামরাগুলি যেমন তেমন ভাবে উল্টেপাল্টে যাবে না। কাঞ্চনজঙ্ঘায় যেমনটা হল, এটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য হত ওই কোচ থাকলে।“
এমনকি রেলের পক্ষ থেকে চেন্নাইয়ের ‘ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি’কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, চাপ কমাতে এলএইচবি কামরা বানানোর।
যদিও মনে করা হচ্ছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের মতো অনেক ট্রেনই একটি নির্দিষ্ট স্টেশনে কিছু বগি ছেড়ে রেখে যায়। ওই বগিগুলো অন্য ট্রেনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। জানা যাচ্ছে, এই ধরণের ট্রেনে আইসিএফ কামরা থাকলে কাপলিং লক খোলা বা জোড়া দেওয়া সুবিধা। বাঁচে সময়ও। অন্যদিকে, এলএইচবি কামরায় সময় বেশি লাগে। ফলে এই সমস্ত ট্রেন গুলিতে এখনও আইসিএফ কামরা রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, একসময় শিয়ালদা-কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস চলত নিউ-জলপাইগুড়ির পর্যন্ত। কিন্তু পরে সেটা ত্রিপুরা আগরতলা এবং রবিবার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে সাব্রুম পর্যন্ত চালানো হচ্ছে। এবিষয়ে রেলের এক প্রাক্তন কর্তা প্রশ্ন তুলেছেন, “উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলে স্বল্প দূরত্বের ট্রেনেও যেখানে অত্যাধুনিক এলএইচবি কোচ দেওয়া হচ্ছে সেখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের মতো লং ডিস্ট্যান্স ট্রেনের জন্য পুরোনো কোচ বরাদ্দ কেন?”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন