হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মা (Nupur Sharma)-র করা বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে উত্তাল হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য (Middle East)। নিজেদের মধ্যে বৈরিতা ভুলে একসুরে ভারতকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, সৌদি আরব, ইরান এবং পাকিস্তান। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় দ্রব্য বয়কটের ডাকও দিয়েছে সেদেশের নাগরিকরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে। তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদও খারিজ করা হয়েছে।
এদিকে, টুইটার থেকে নিজের বিতর্কিত মন্তব্য নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করেছে নূপুর শর্মা। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু, তারপরেও বিতর্ক থামেনি।
নূপুর শর্মা কে?
লিঙ্কডইন (LinkedIn) প্রোফাইল থেকে জানা যাচ্ছে, নূপুর শর্মা শুধু একজন বিজেপি নেত্রী ছিলেন না, তিনি একজন পেশাদার আইনজীবী। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হওয়ার পর ২০১১ সালে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স (LSE) থেকে আইনে স্নাতকোত্তর (LLM) ডিগ্রি অর্জন করেন নূপুর শর্মা।
বিজেপির বিতর্কিত এই নেত্রী কলেজ জীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িত। ২০০৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১০ পর্যন্ত টিচ ফর ইন্ডিয়ার এম্বাসেডর হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
রাজনীতিতে প্রবেশ
২০০৮ সালেই আইনের ছাত্রী হিসাবে রাজনীতিতে অংশ নেন নূপুর শর্মা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (DUSU)-এর সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। পরে বিজেপির যুব শাখায় কাজ করেন নূপুর।
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে
২০১৫ সালে দিল্লি নির্বাচনে, নয়াদিল্লি বিধানসভা কেন্দ্রে আম আদমি পার্টির (AAP) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)-এর বিরুদ্ধে বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে লড়েন নূপুর শর্মা। যদিও এই আসনে হেরে যান তিনি।
বিতর্কিত মন্তব্য
হজরত মহম্মদকে নিয়ে নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে হিংসার আগুন জ্বলে ওঠে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। গত, ৪ জুন এই গোষ্ঠী সংঘর্ষে আহত হন ৪০ জনের অধিক মানুষ। হিংসায় জড়িত থাকার দায়ে দেড় হাজারের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গেপ্তার করা হয়েছে ১৮ জনকে।
অন্যদিকে, 'বিতর্কিত' মন্তব্যের জেরে হিংসা ছড়ানো এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার দায়ে হায়দরাবাদ, পুনে এবং মুম্বইতে নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিস। বিজেপির পক্ষ থেকে তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে দলের সদস্যপদ।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্কের সূত্রপাত
নূপুরের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে হিংসার ঘটনার সমালোচনা সীমাবদ্ধ ছিল ভারতের মধ্যে। তবে, এক ‘ফ্যাক্টচেকার’ নূপুরের বিতর্কিত মন্তব্যের ভিডিও টুইট করার পরেই বিশ্বজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়।
যদিও নূপুর দাবি করেন, তাঁর ভিডিওটি এডিট করা হয়েছে। তিনি অভিযোগের আঙুল তোলেন ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট অল্ট নিউজের (Alt News) সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবায়েরের দিকে।
মোদী সরকারের আমলে বিজেপি নেত্রীর মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছে 'অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন' (OIC)। এক বিবৃতিতে ওআইসি জানিয়েছে, 'ভারতে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব, মুসলমানদের প্রতি প্রতি তীব্র ঘৃণা ও তাঁদের প্রতি খারাপ ব্যবহারের নিয়মতান্ত্রিক অনুশীলনের পেক্ষাপটে এই ঘটনা সামনে এসেছে।'
তবে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি সোমবার ওআইসি সচিবালয়ের মন্তব্যকে 'সংকীর্ণমনা' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, 'ভারত সরকার সকল ধর্মের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদান করে।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন