'টিভি চ্যানেলে বিদ্বেষ মূলক বক্তব্য (Hate Spech) দেশের পক্ষে বিরাট বিপদ। এখনই এটি বন্ধ করা দরকার।' শুক্রবার, হেট স্পীচ নিয়ে এভাবেই নিজেদের কঠোর মনোভাব স্পষ্ট করেছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে এম জোসেফ (Justice KM Joseph) এবং বিচারপতি বি ভি নাগরত্বের (Justice BV Nagarathna) বেঞ্চ।
শুধু তাই নয়, টিভি সঞ্চালকের চেয়ারে বসে যদি কেউ বিদ্বেষ ও ঘৃণা ভাষণ দেওয়ার পথে হাঁটেন, তাহলে তাঁকে অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে। দরকারে তাঁর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত আর্থিক জরিমানাও করতে হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর, এক পর্যবেক্ষণে বিচারপতি কে এম জোসেফ জানিয়েছিলেন, 'টেলিভিশনে ‘বিদ্বেষ মূলক’ বক্তব্য রোধে সঞ্চালক বা অ্যাঙ্করের ভূমিকা ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’। মূলধারার মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘বিদ্বেষ মূলক’ বক্তৃতাগুলি অনিয়ন্ত্রিত। কেউ যাতে ঘৃণাত্মক বক্তব্য রাখতে না পারে, তা দেখার দায়িত্ব অ্যাঙ্করদের। আলোচনার ক্ষেত্রে কোথায় থামতে হবে, থামাতে হবে তা জানা উচিত তাঁদের।'
পর্যবেক্ষণে আদালত জানিয়েছে, ‘ঘৃণা সূচক বক্তব্য আসলে কাউকে হত্যা করার মতো বিষয়। এটি আপনি একাধিক উপায়ে করতে পারেন।’ কেন ঘৃণা সূচক বক্তব্য দর্শকদের আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল শীর্ষ আদালত।
কিন্তু, তারপরেও থামেনি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য। যা নিয়ে ফের বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারপতি কে এম জোসেফ। শুক্রবার তিনি বলেন, 'সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা চাইলেও, আমরা একপেশে সংবাদমাধ্যম চাই না।'
একইসঙ্গে, বিচারপতি জোসেফ ও বিচারপতি নাগরত্বের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, 'সংবাদপত্রের তুলনায় সংবাদ চ্যানেলের ক্ষমতা বেশি। অথচ এখন টিআরপি (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট)'র দিকে তাকিয়েই সবকিছু চলছে। এমনকি সমাজে বিভাজনও তৈরি করা হচ্ছে! সংবাদ চ্যানেলে এসব চলতে দেওয়া যায় না। একজন সঞ্চালকও যদি এই অপকর্ম চালান, তবে তাঁকে সরিয়ে দিতে হবে।'
শুধু সংবাদমাধ্যমই নয়, মোদী-শাহের পরিচালনাধীন দিল্লি পুলিশ সম্পর্কেও এদিন বিরূপ পর্যবেক্ষণ করেছে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচুড়ের নেতৃত্বাধীন আরেকটি বেঞ্চ। হিন্দুত্ববাদী 'সুদর্শন নিউজ' চ্যানেলের ডিরেক্টর সুরেশ চাভাঙ্কে এক ধর্মীয় সভায় প্রকাশ্যে 'সংখ্যালঘুদের খুন করার' হুমকি দেওয়ার পরেও, দিল্লি পুলিশ কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, 'এই ঘটনায় কেবল এফআইআর দায়েরেই দেরি করেনি পুলিশ, তদন্তও একটুও এগোয়নি, কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি!'
২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে 'হিন্দু যুব বাহিনী'র এক অনুষ্ঠানে 'হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের স্বার্থে সংখ্যালঘুদের খুন করার শপথ' গ্রহণ করিয়েছিলেন সাংবাদিক সুরেশ চাভাক্কে।
সে সম্পর্কে সমাজকর্মী তুষার গান্ধীর দায়ের করা এক মামলায় এদিন প্রধান বিচারপতি দিল্লি পুলিশকে বলেন, 'ঘটনার পাঁচ মাস পরে ২০২২'র ৪ মে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে! কেন পাঁচ মাস লাগল আপনাদের? এই ঘটনায় ক'জনকে গ্রেপ্তার করেছেন? তদন্তে 'উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি' নিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের থেকে জানুন। উনি রিপোর্ট দেওয়ার দু'সপ্তাহের মধ্যে আদালতে হলফনামা জমা দেবেন আপনি।'
সব মিলিয়ে এদিন সর্বোচ্চ আদালতের দু'টি পৃথক বেঞ্চ যেভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ভাষণ নিয়ে কঠোর পর্যবেক্ষণ জানালো, তা নিশ্চিতভাবেই তাৎপর্যবাহী।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন