পিএম-কেয়ার্স (প্রাইম মিনিস্টার্স সিটিজেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ ইন এমারজেন্সি সিচ্যুয়েশন) ফান্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি বলেন, PM CARES Fund-কে কেন কোনও অডিট বা RTI-র অধীনে আনা হচ্ছে না? কেন তহবিলের সবকিছু গোপনীয়তায় মুড়ে রাখা হচ্ছে? কেন কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হচ্ছে না? যেখানে তহবিলে ৬০ শতাংশ অনুদান এসেছে পাবলিক সেক্টর কোম্পানিগুলি থেকে।
কংগ্রেসের নেতা সিংভি দাবি করেন, PM CARES Fund-এ আরও স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন এবং ৫,০০০ কোটি টাকার অনুদান নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকলে, তারও জবাব দেওয়া দরকার। এগুলিকে তথ্যের অধিকার আইন বা RTI-এর অধীনে আনা উচিত।
তিনি অভিযোগ করন, যে তহবিলে প্রায় ৬০ শতাংশ অনুদান এসেছে সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন পাবলিক সেক্টর থেকে; সেই তহবিলই সাংবিধানিক নিয়মের লঙ্ঘন করেছে এবং কোনও আইনি অনুমোদন ছাড়াই 'অর্থ সংগ্রহ' করছে দেশের শীর্ষ অফিস (PMO Office)।
সিংভি বলেন, 'পিএম কেয়ারস ফান্ডকে ঘিরে বিতর্কগুলি প্রমাণ করে যে, এটি তৈরি হয়েছে একটি উদাসীন সরকার, উদাসীন শাসক দল এবং প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা। পিএম কেয়ারসে ৬০ শতাংশ অনুদান এসেছে ওএনজিসি (ONGC), এনটিপিসি (NTPC), আইওসি (IOC)-সহ একাধিক সরকার পরিচালিত এবং সরকারী মালিকানাধীন সংস্থা থেকে। PM CARES-এ 'C' বলতে বোঝায় জবরদস্তি (coercion), বিশৃঙ্খলা (chaos), বিভ্রান্তি (confusion) এবং দুর্নীতি (corruption)।'
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, 'রাজ্য সরকারগুলি কি কোনও আইনী অনুমোদন ছাড়াই বড় অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করতে পারে? কিন্তু, এখানে কোনও আইনি অনুমোদন ছাড়াই ৫,০০০ কোটি টাকা পাচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ নির্বাহী অফিস! কোথায় জবাবদিহিতা? কোথায় ট্র্যাকিং?'
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দাবি করে সিংভি বলেন, 'সরকার দাবি করছে, PM CARES একটি পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। এটি কোনও সরকারি সংস্থা নয়। তাই, তথ্যের অধিকার আইন (RTI)-এর আওতায় এই তহবিল সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন তোলা যেতে পারে না। শুধু তাই নয়, এই তহবিলকে অডিটের বাইরে রাখা হয়েছে, কারণ, এই তহবিলে বাজেট থেকে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয় না। শুধুমাত্র স্বেচ্ছায় অনুদান জমা পড়ে। সংবিধান বা সংসদের তৈরি কোনও আইনের মাধ্যমে এই তহবিল তৈরি করা হয়নি।'
'কিন্তু, পরিহাসের দিকে তাকান, যে তহবিলের হিসাব-পরীক্ষার জন্য সিএজি বা RTI-এর মতো কোনও সরকারী শর্তাবলী নেই, সেই তহবিলের মূল দাতা হল নবরত্ন এবং মিনি রত্ন সংস্থাগুলির মতো সরকারী মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলি।'
প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, 'কেন এই তহবিলটি দাতার নাম প্রকাশ করছে না। যদি পিএম-কেয়ার্সের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনও সম্পর্ক না থাকে, তাহলে কেন তিনি একটা বেসরকারি তহবিলে চাঁদা জোগাড়ের জন্য নিজের পদের অপব্যবহার করেছেন?'
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় পিএম-কেয়ার্স তহবিল তৈরি হয়েছিল। শুধু যে প্রধানমন্ত্রী এর চেয়ারম্যান, তা নয়। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী তহবিলের অছি পরিষদের সদস্য। এর ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ছবি রয়েছে। নামের সঙ্গে জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভও রয়েছে। তাতে চাঁদা চেয়ে সরকারি টাকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ব্যাঙ্কের কর্মীদের বেতন কেটে তহবিলে টাকা জমা করা হয়েছে। রেল থেকে বিদেশ মন্ত্রক, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রক - সরকারের প্রতিটি মন্ত্রকই কোটি কোটি টাকা এই তহবিলে অনুদান হিসেবে জমা করেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন