কেন্দ্রের ‘তথ্য প্রযুক্তি বিধি ২০২৩’-র সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বোম্বে হাইকোর্টে মামলা করেছেন কৌতুক অভিনেতা কুণাল কামরা। ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪, ১৯(১)(এ) এবং ১৯(জি) এবং ২০০০ সালের তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৭৯ নং অধ্যায়ের উপর ভিত্তি করে এই মামলা করেছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল), বিচারপতি গৌতম প্যাটেল এবং বিচারপতি নীলা গোখলের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলা করেছেন কুণাল কামরার আইনজীবী নভরোজ সেরভাই।
আদালতে কুণাল কামরা দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘তথ্য প্রযুক্তি বিধি’র এই সংশোধনীটি হল ‘সংবিধান বিরোধী এবং নাগরিকদের বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী’। সোশাল মিডিয়ায় এই একতরফা নিয়ন্ত্রণ চালু হলে তাঁর মতো পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এই মামলার শুনানির পরে, এব্যাপারে নিজেদের বক্তব্য হলফনামার আকারে জমা দেওয়ার জন্য কেন্দ্র সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে বোম্বে হাইকোর্ট। অনলাইন সংবাদ মাধ্যম- ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ জানিয়েছে, এই সংশোধনীর কোনও বাস্তব পটভূমি বা যুক্তি আছে কিনা, তা সুস্পষ্ট করে, আগামী ১৯ এপ্রিলের মধ্যে তা জানানোর জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতিরা। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২১ এপ্রিল।
প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকার ইনফরমেশন টেকনোলজি (ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড) রুলস, ২০২১'এ কয়েকটি সংশোধনী ঘোষণা করে মোদী সরকার।
সংশোধনী বিধিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক একটি ‘ফ্যাক্ট চেকিং ইউনিট’ তৈরি করবে, যারা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া সরকার-বিরোধী কোন তথ্যকে নিজের বিবেচনা অনুযায়ী ‘মিথ্যা’ বা ‘ভুয়ো’ বা ‘বিভ্রান্তিমূলক অনলাইন তথ্য' হিসাবে চিহ্নিত করার অধিকার পাবে।
শুধু তাই নয়, নয়া বিধিতে বলা রয়েছে, এই ফ্যাক্ট চেকিং ইউনিট কোন অনলাইন তথ্য বা পোস্টকে ‘মিথ্যা’ বা ‘ভুয়ো’ বলে চিহ্নিত করা মাত্রই সেটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সোশাল মিডিয়াকে। তা না হলে, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৭৯ ধারার ‘নিরাপদ আশ্রয় সুরক্ষা’ হারাবে তারা।
এ হেন বিপজ্জনক সংশোধনীর তীব্র বিরোধিতা করে বম্বে হাইকোর্টে মামলা করেন কুনাল কামরা। আবেদনে তিনি বলেন, সরকার যদি এভাবে নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে পেশ করা বক্তব্য বিচারের ভার নিয়ে নেয়, তাহলে তার প্রভাব বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
তিনি নিজেকে ‘রাজনৈতিক কৌতুকশিল্পী’ দাবি করে কুণাল জানান, সাধারণত নানান সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মেই তিনি তাঁর ভিডিও দেন। তাঁর আশঙ্কা, ‘কেন্দ্রের নয়া বিধি চালু হলে আমার এসব ভিডিও একতরফাভাবে ব্লক করে দেওয়া হবে। আমার সোশ্যাল মিডিয়া আকাউন্ট সাসপেন্ড হবে অথবা বাতিল করে দেওয়া হবে। এর ফলে পেশাগতভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’
এই সংশোধনীকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দেওয়ার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে কুনাল বলেন, ‘এই বিধি অনুযায়ী সরকার যাতে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে না পারে তা নিশ্চিত করুক আদালত।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন