মহারাষ্ট্র রাজনীতির ‘গ্র্যান্ড ওল্ড ম্যান’ হিসেবে পরিচিত শরদ পাওয়ার কি এবার রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর নিতে চলেছেন? মঙ্গলবার এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন ৮৩ বছর বয়সী এনসিপি নেতা। এদিন তিনি জানান, রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে ১৮ মাস পর তাঁর মেয়াদ শেষ হলে, ভবিষ্যতে আর কোনও নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
প্রায় ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবন। ১৯৯৯ সালে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) –এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শরদ পাওয়ার। পশ্চিম মহারাষ্ট্রের বারামতিকে পাওয়ার গড় হিসেবে ধরা হয়। এদিন সেই বারামতিতে জনসভায় দাঁড়িয়ে শরদ পাওয়ার বলেন, ‘আমি ক্ষমতায় নেই… রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মেয়াদ আর বছর দেড়েক রয়েছে। ভবিষ্যতে কোনও ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। একটা সময় তো থামতেই হয়।‘ পাশাপাশি, তাঁকে ১৪ বারের বিধায়ক এবং সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য বারামতির নাগরিকদের ধন্যবাদও জানান।
আগামী ২০ নভেম্বর মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনে কংগ্রেস এবং শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) –এর সঙ্গে জোট বেঁধেছে এনসিপি (শরদ পাওয়ার)। অন্যদিকে, তাঁদের বিপক্ষে রয়েছে বিজেপি, শিন্ডেসেনা এবং ভাইপো অজিতের এনসিপি জোট। আসন্ন নির্বাচনে পাওয়ার বনাম পাওয়ার লড়াই দেখতে চলেছে বারামতি। অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শরদ পাওয়ারের নাতি যুগেন্দ্র পাওয়ার।
বারামতি কেন্দ্রে পাঁচ বারের বিধায়ক অজিত পাওয়ার। কিন্তু এতদিন তিনি শরদ পাওয়ারের ছত্রছায়ায় এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তবে এবারে বিষয়টি আলাদা। শরদ পাওয়ারের এনসিপি থেকে আলাদা হওয়ার পর এই প্রথম নিজের ক্ষমতায় লড়াই করবেন অজিত। এই আবহে বারামতি নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে শরদ পাওয়ারের পরবর্তী উত্তরসুরি কে হতে চলেছেন।
এর আগে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বারামতি কেন্দ্র থেকে জয়ী হন শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন অজিতের স্ত্রী। অজিতের সমালোচনা না করে বারামতী জনসভায় শরদ পাওয়ার বলেন, ‘ওঁর (অজিত) বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই আমার। প্রায় ৩০ বছর আপনাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এখন সময় হয়েছে তরুণদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার, যারা আগামী ৩০ বছর আপনাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে। আপনাদের ভোট চাইছি না। কিন্তু ভবিষ্যৎমুখী সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের।‘
তবে শরদ পাওয়ারের রাজনৈতিক জীবনে অবসর নেওয়ার জল্পনা এই প্রথম নয়। এর আগে চলতি বছর জানুয়ারিতে এই নিয়ে কথা বলতে শোনা যায় ভাইপো অজিত পাওয়ারকে। সেই সময় অজিত কিছুটা কটাক্ষের ছলে মন্তব্য করেছিলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পর মানুষকে থামতে হয়। কিন্তু কেউ কেউ প্রস্তুত নন। ৮০ বছর হওয়ার পরেও প্রস্তুত নন।‘ সেবার এর উত্তরে শরদ বলেছিলেন, ‘না আমি ক্লান্ত, না আমি অবসরপ্রাপ্ত।‘
গত বছর মে মাসে দলের ঘোর সংকট কালে দলের নেতৃত্ব থেকে ইস্তফা ঘোষণা করেছিলেন শরদ পাওয়ার। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে সেই ইস্তফা পত্র খারিজ করে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে সে সময় নিজের ইস্তফা পত্র ফিরিয়ে নিয়েছিলেন শরদ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন