‘বেদের সময় থেকে ভারতের গণতন্ত্র’- এই বিষয়ে আলোচনাচক্র করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর), রাজ্যপাল মারফত দেশের সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি (UGC)।
আর, ইউজিসি’র পাঠানো এই নির্দেশিকার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সিপিআই (এম) পলিটব্যুরো। শুক্রবার, এক নিয়ে বিবৃতিতে পলিটব্যুরো জানিয়েছে, ‘এই নির্দেশ পুরোপুরি সংবিধান বিরোধী এবং ইউজিসি’র নীতি বিরোধী।’
জানা যাচ্ছে, ২৬ নভেম্বর, সংবিধান দিবসের দিন সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ভারত গণতন্ত্রের জননী’ ও ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রাচীন উত্স’ শিরোনামে বক্তৃতামালার আয়োজন করতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে ইউজিসি।
এছাড়া, আলোচনার ১৫ টি বিষয়বস্তুও ঠিক করে দিয়েছে ইউজিসি। এরমধ্যে রয়েছে, ভগবৎ গীতায় আদর্শ রাজার ধারণা, বেদের সময় থেকে ভারতের গণতন্ত্র, বিশ্বে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নির্মাণে অগ্রবর্তী ছিল হরপ্পাবাসী ইত্যাদি। এমনকি, খাপ পঞ্চায়েত এবং তাদের গণতান্ত্রিক পরম্পরা নিয়েও আলোচনা করতে বলা হয়েছে।
অন্যান্য বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে - অশোকের আক্রমণের সময়ে কলিঙ্গে গণরাজ্যের অস্তিত্ব, প্রাচীন সংস্কৃত ধর্মশাস্ত্রে গণতন্ত্র, প্রাচীন ভারতে রাজকীয় গণতন্ত্র: সংস্কৃত সাহিত্যে গণতান্ত্রিক প্রবণতার পরীক্ষা, প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় তামিলনাড়ুতে স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থা, অর্থশাস্ত্রে গণতান্ত্রিক চিন্তা এবং ঐতিহ্যের প্রতিফলন ইত্যাদি।
এই বিষয়বস্তুর উপর সারা দেশে ৯০টি বিশ্বাবিদ্যালয়ে ৯০টি বক্তৃতামালার আয়োজন করেছে ইউজিসি। এর প্রতিক্রিয়ায় পলিটব্যুরো জানিয়েছে, ‘বক্তৃতার বিষয়বস্তু দেখে মনে হচ্ছে ভারতে বাস্তবে যে বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা ছিল তাকে অস্বীকার করা হয়েছে এখানে। এতে জাতভিত্তিক সামাজিক ব্যবস্থার কথাও অস্বীকার করা হচ্ছে, যা আধুনিক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আজও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’
সিপিআই(এম) সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কটাক্ষের সুরে বলেন, 'ইউজিসি চেয়ারম্যানের হাস্যকর দাবি হলো - প্রাচীন ভারত অনন্য ছিল। কারণ, সেসময় ভারতে কোনও স্বৈরতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্র ছিল না।'
একইসঙ্গে, পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'ইউজিসি চেয়ারম্যান এই নির্দেশ জারী করে সংবিধানের নীতি নিয়ম অস্বীকার করছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সংবিধানের নিয়ম মোতাবেক নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল, ইউজিসি তা মানেনি। তা লঙ্ঘন করে সরাসরি আরএসএস বিজেপি-র নিযুক্ত রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কর্মসূচি রূপায়ণ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে।'
'এতে দেশের নয়া শিক্ষানীতির স্বরূপ প্রকাশ হয়ে পরেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্র তাদের নয়া শিক্ষা নীতি (New Education Policy 2020)-কে বৈজ্ঞানিক ভাবনা চিন্তা ও যুক্তি বোধকে ধ্বংস করার একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে। সংবিধানকে তারা খাটো করছে', বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন