বিধায়ক এবং পর্ষদ সভাপতি পদের প্রভাব খাটিয়ে পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের নামে একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। গত মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে এমনই অভিযোগ তুলেছিল ইডি। এবার রাজ্যের প্রায় ৫৩০টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মানিক পুত্র সৌভিক ভট্টচার্যের সংস্থার নামে টাকা তোলার অভিযোগ করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (ED)।
ইডি সূত্র মোতাবেক জানা গেছে, রাজ্যের মধ্যে এমন ৫৩০টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে B.Ed, D.EL.Ed-র কোর্স করানো হয়। সেই প্রতিষ্ঠানগুলির সবকটি থেকেই তৃণমূল বিধায়ক-পুত্র সৌভিক ভট্টাচার্যের কন্সাল্টেন্সির নাম করে ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এসেছে। ইডির অনুমান, মানিক-পুত্রের নিজস্ব সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে যে ২ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার হদিশ মিলেছে - তা ওই ৫৩০টি প্রতিষ্ঠান থেকেই নেওয়া।
ভুক্তভোগী এক সংস্থার অভিযোগ, ২০১৮ সালে পুজোর সময় মানিকের অফিস থেকে ফোন যায় তাদের কাছে। অর্থপ্রাপকের নাম না উল্লেখ করে ৫০ হাজার টাকার ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ দিতে বলা হয়। টাকা না দিলে সমস্যায় পড়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে চেক পাঠানো হয়েছিল। ২ অক্টোবর জানা গেছে, টাকা জমা পড়েছে ‘অ্যাকিউরি কনসালটেন্সি সার্ভিসেস’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। ইডি সূত্রে জানা গেছে, সেই সংস্থার মালিক মানিক-পুত্র সৌভিক ভট্টাচার্য।
এমন অনেক কলেজের নথিপত্র গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে বলে দাবি ইডির। জানা গেছে, শিক্ষক শিক্ষণ সংস্থার পাশাপাশি ‘অ্যাকিউরি কনসালটেন্সি’র সঙ্গে নিজের আরও একটি সংস্থার চুক্তি করেন সৌভিক। সমস্ত টাকা ঢুকেছে তাঁরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
'যাদবপুর, কলকাতা ৩২'-র ঠিকানার অন্তর্গত এই ‘অ্যাকিউরি কনসালটেন্সি সার্ভিসেস’-এ ঠিক কী কী কাজ হয় তা এখনও অজানা। সংস্থার ওয়েবসাইটেও এর কোনও উল্লেখ নেই। নবগঠিত সংস্থাটি বিগত এক দশক ধরে বিভিন্ন সংস্থাকে কী পরিষেবা দিয়ে আসছে সে বিষয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। সংস্থার নম্বরে যোগাযোগ করতে গেলেই প্রতিবার এক মহিলা ফোন ধরে বলেন, 'তং মত কিজিয়ে' অর্থাৎ, বিরক্ত করবেন না।
এখানেই শেষ নয়, ইডি সূত্রের খবর, অ্যাকিউরির অধীনে রয়েছে আরও তিনটি সংস্থা। সেগুলির মধ্যে একটির ‘অ্যাডভাইসরি কমিটি’-র মাথায় রয়েছে এক প্রাক্তন আমলার নাম। ‘এডুকেশন কমিটি’-র মাথায় একটি বেসরকারি কলেজের প্রাক্তন উপাচার্য এবং ‘টেকনিক্যাল কমিটি’-র মাথায় এক তরুণ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের নাম রয়েছে। প্রয়োজনে ওই তিন ব্যক্তিকেও জেরা করা হতে পারে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন