আলিপুরদুয়ারের এক মহিলা সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের মামলা নিয়ে গত তিন বছর ধরে তদন্ত করছিল সিআইডি। শুক্রবার তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি, এবার ওই মামলার তদন্তভার সিআইডির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২৫ আগস্ট থেকেই তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়ে আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে দুই সংস্থাকে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন তিনি।
তিন বছর আগে ‘আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতি’র বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ ওঠে। ঋণ দেওয়ার নাম করে ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে আলিপুরদুয়ার জেলার প্রচুর মানুষের বিনিয়োগ করা টাকা ‘আত্মসাৎ’ করার অভিযোগ নিয়ে গত তিন বছর ধরে তদন্ত করছিল সিআইডি। কিন্তু তিন বছরের তদন্তের পরেও ওই সংগঠনের তরফে ঋণ পেয়েছেন, এমন কাউকেই খুঁজে পায়নি তদন্তকারী সংস্থা। তবে ওই সংগঠনের পাঁচ কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে এই অন্যতম মামলাকারী কল্পনা দাস সরকার জানান, আলিপুরদুয়ারের ওই মহিলা সমবায় সমিতিতে তিনি ২১ হাজার ১৬৩ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। শুধু তিনিই নন, সমস্ত বিনিয়োগকারীরা মিলে মোট ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। তার অভিযোগ, “সমবায় সমিতির তরফ থেকে ওই টাকা ঋণ হিসেবে খাটানো হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু টাকা ফেরত পাওয়ার সময় দেখা যায় ওই সংগঠনের আর কোনও ‘অস্তিত্ব’ই নেই।” আদালতের পর্যবেক্ষণ, যেহেতু ৩ বছরের তদন্তের পরেও ঋণগ্রহীতা হিসেবে কারও নাম পায়নি সিআইডি, তাই স্বাভাবিকভাবেই মনে করা যেতে পারে ওই টাকা ইতিমধ্যেই পাচার হয়ে গিয়েছে।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, “প্রায় তিন বছর ধরে তদন্ত করেও এই মামলার কোনও কিনারা করতে পারেনি সিআইডি। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এর মধ্যে একটা বিরাট বড় প্রতারণা চক্র কাজ করছে। এই মামলার তদন্তভার সিআইডির কাছ থেকে নিয়ে ইডি ও সিবিআইকে দেওয়া হচ্ছে। তদন্ত চলাকালীন কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা বা প্রয়োজনে হেফাজতে নেওয়ার ক্ষেত্রেও দুই সংস্থাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে। ২৫ আগস্ট থেকেই দুই সংস্থা তদন্ত শুরু করে দেবে।”
এছাড়াও তদন্তকারী সংস্থা চাইলে এবং প্রধান বিচারপতি অনুমতি দিলে প্রতি শনিবার সার্কিট বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজে উপস্থিত থাকতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন