রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ৮০ ভাগ লোক বিজেপির সাথেই আছে। এমনই বিষ্ফোরক মন্তব্য করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। গত শুক্রবার শুরু হয়েছে রাজ্য বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন। কিন্তু সেই অধিবেশনে রাজ্যের কোনও বিজেপি বিধায়ক অংশ নেননি বলেই জানা গেছে।
আজ সোমবার, বিধানসভায় সাতজন বিধায়কের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জোড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল। কিন্তু পদ্ধতিগত কারণে বিধানসভার স্পিকার সেই প্রস্তাব দুটি বাতিল করে দেন।
সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভ কর্মসূচী নেয় গেরুয়া শিবির। সেই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রস্তাব খারিজ প্রসঙ্গে বলেন, "কোনও সিদ্ধান্ত স্পিকারের নিজের ইচ্ছায় হয়নি। আমি সকালেই আমাদের দলের মুখ্য সচেতককে এ বিষয়টি জানিয়েছিলাম যে, আমাদের প্রস্তাব গৃহীত হবে না। ওদের মধ্যে তো আমার লোক আছে এখনও। মুখ্যমন্ত্রী পরিষদের মন্ত্রীকে ফোন করে বলেছেন, ওদের প্রস্তাব যেন কোনও ভাবেই গৃহীত না হয়। আমি সকাল ন'টার সময় বিজেপি পরিষদীয় দলের সদস্যদের এ কথা জানিয়ে দিই। ওদের ঘরের ৮০ ভাগ লোক তো আমাদের সঙ্গে আছে।"
শুভেন্দুর মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। মূলত শাসকদলের কর্মী থেকে উচ্চপদস্থ নেতাদের মধ্যে অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরী করতেই এই কথা বলেছেন তিনি, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
এর আগে শাসক-বিরোধীদলের বিধায়কদের মধ্যে হাতাহাতি জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বিধানসভা। হাতাহাতির জেরে নাক ফেটে গিয়েছিল চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের। তাঁর ওপর হামলা চালানোর জন্য তিনি অভিযোগ করেছিলেন সরাসরি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে। তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ ছিল, শুভেন্দু তাঁর নাকে ঘুসি মেরেছেন।
এই ঘটনার জেরে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল যে, বিধানসভার অধ্যক্ষকে বাধ্য হয়ে কড়া পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। বিরোধী দলনেতা-সহ পাঁচজন বিজেপি বিধায়ককে বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত সাসপেন্ড করেছিলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দোপাধ্যায়। সেই তালিকায় একদিকে যেমন আছেন শুভেন্দু অধিকারী। তেমনই আছেন বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা, বিধায়ক দীপক বর্মন, শঙ্কর ঘোষ, নরহরি মাহাতো।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই বিরোধী দলের অন্দরেই গুপ্তচর আছে বলে প্রকাশ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু তাঁর সেই দাবি অস্বীকার করেছিলেন রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। ফের সেই বিতর্ককে সামনে এনে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "ওদের লোকেরাই তো আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের প্রস্তাব গৃহীত হবে না। আগামিকাল ফের শুনানি রয়েছে আদালতে। সেই শুনানিতেই আদালত যা নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ী আমরা শুনব।"
যদিও শুভেন্দুর এই দাবি মানেনি তৃণমূল পরিষদীয় দল। তাদের দাবি, মিডিয়ার লাইমলাইটে থাকার জন্য শুভেন্দু অধিকারী এমন ভিত্তিহীন কথা বলছেন। এ রাজ্যে বিজেপির অবস্থা ক্রমশ তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাই তিনি এইসব কথা বলছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন