দাড়িভিটকাণ্ডে এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। ২০১৮ সালে হওয়া দাড়িভিট কাণ্ডে বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগ থাকায় এই রায় দিয়েছেন তিনি। পাশপাশি রাজ্যকে ওই দুই মৃত ছাত্রের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
৫ বছর পর দাড়িভটি নিয়ে রায় দিল হাইকোর্ট। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেন, 'ওইদিন ঘটনাস্থলে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এনআইএ তদন্ত হওয়া দরকার। এই তদন্তের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্যেকে।'
চলতি মাসেই এই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি বলেছিলেন, 'এত বছর হয়ে গেল, তাও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়নি রাজ্য। এটাও কি হাইকোর্টকে নির্দেশ দিতে হবে?' রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাজের উপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, 'জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারের দেওয়া রিপোর্ট দেখেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ ভেবে নিয়েছিল মানবাধিকার কমিশনে। এমন উদাসীন মনোভাব হলে তদন্ত এগোবে কী করে? ২০২০ সালে কমিশনের সদস্য ছিল না বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৮ সালে। ওই ২ বছর কমিশন কী কাজ করেছে?'
আদালতের এনআইএ তদন্তের নির্দেশের রায়ে খুশি মৃত দুই ছাত্রের পরিবার। নিহত এক ছাত্রের মা বলেন, "হাইকোর্টের রায়ে খুব খুশি হয়েছি। আশা করছি খুনীরা শাস্তি পাবে এবার। আমরা সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলাম। তবে এনআইএ তদন্তে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আর সরকার যদি ক্ষতিপূরণও দেয়, সেটা নিয়ে কী করবো? সেই ক্ষতিপূরণ তো আমাদের 'মা' বা 'বাবা' বলে ডাকতে পারবে না।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিট হাইস্কুলে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল। ওই বছর সেপ্টেম্বর মাসে স্কুলে উর্দু ভাষার শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই সময় বোমা বিস্ফোরণ হয় এবং পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় তাপস বর্মণ ও রাজেশ সরকার নামে দুই ছাত্র। এই ঘটনার জেরে স্থানীয়দের বিক্ষোভে প্রায় দু মাস ওই স্কুল বন্ধ ছিল।
ঘটনার ৫ দিন পর তদন্তভার হাতে পেয়েছিল সিআইডি। কিন্তু সিআইডি-র তদন্তে সন্তুষ্ট ছিলে না ওই দুই মৃত ছাত্রের পরিবার। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছিল শক্তিশালী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছিল। কিন্তু ঠিক কোন অস্ত্র তা এখনও জানতে পারেনি সিআইডি। যা নিয়ে হাইকোর্টেও ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল সিআইডিকে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন