সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারির ৫৬ দিনের মাথায় অবশেষে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করল ইডি। সোমবার কলকাতায় ইডির বিশেষ আদালতে এই চার্জশিট পেশ করা হয়। ১১৩ পাতার চার্জশিটে শাহজাহানের ২৬১ কোটি টাকার সম্পত্তির কথা জানিয়েছে ইডি। যার মধ্যে ২৭ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি।
সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারির পর গত মার্চ মাসে রেশন দুর্নীতিতে আর্থিক নয়ছয়ের মামলায় শাহজাহানকে গ্রেফতার করে ইডি। গ্রেফতারির ৫৬ দিন পর আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়। ১১৩ পাতার চার্জশিটে বলা হয়েছে এখনও পর্যন্ত শাহজাহান বাহিনীর ২৬১ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। যদিও সেই টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে ইডির পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যে ২৭ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। চার্জশিটে আরও জানানো হয়েছে, আনুমানিক ১৮০ বিঘা জমি দখল করেছেন শাহজাহান। এই পরিমাণও আরও বাড়তে পারে।
চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছে শাহজাহানের ভাই আলমগিরের নাম। এ ছাড়াও দিদার বক্স মোল্লা, শিবপ্রসাদ হাজরার নাম রয়েছে অভিযুক্ত হিসাবে। সাক্ষী হিসাবে সরকারি আধিকারিকদেরও বয়ান নেওয়া হয়েছে।
জমি দখল, গ্রামবাসীদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের পাশাপাশি সন্দেশখালিতে বেআইনি অস্ত্রের প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে। গত ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোট চলাকালীন শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মী আবু তালেব মোল্লার বন্ধ, পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। ২২৮টি কার্তুজ, ১২০টি বুলেট এবং দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে ৭টি পিস্তল ও রিভলভার। এছাড়াও বিপুল পরিমাণে দেশি বোমা ও বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার হয়েছিল। সিবিআই, এনএসডি, সিআরপিএফ যৌথ তল্লাশি অভিযান, ইজরায়েলে তৈরি অত্যাধুনিক প্রেকটিক ডিভাইসও নামানো হয়েছিল।
চার্জশিট প্রসঙ্গে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআইএম প্রার্থী নিরাপদ সরদার এদিন বলেন- “তাহলে তো প্রমাণ হলো আমাদের পার্টি, আমরা প্রথম থেকে যা বলছিলাম, বিধানসভায় আমি যা বলেছিলাম তা সঠিক। শাহজাহানের জমি দখলের পরিমাণ আরও বেশি। এরা লুট চালিয়েছে গত কয়েকবছর ধরে, তবে শাহজাহান গ্রেফতার হলেও আরও অনেক ছোটখাটো শাহজাহান ঘুরছে সন্দেশখালিতে। এদের গ্রেফতার না করলে, অস্ত্র উদ্ধার না করলে সন্দেশখালির মানুষ শান্তিতে ভোট দিতে পারবে না।“
রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল শাহজাহানের। মন্ত্রীর মদতেই সুন্দরবনের দুর্নীতির কারবারে যুক্ত ছিল শেখ শাহাজাহানের বলে অভিযোগ উঠেছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ছাড়া আরও দু'জন মন্ত্রীর সঙ্গে শাহজাহানের ঘনিষ্ঠতার কথাও আদালতে জানিয়েছিল ইডি। এছাড়াও, বর্তমানে ব্যারাকপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের হাত ধরে নৈহাটি বিধানসভা এলাকায় শেখ শাহজাহানের হাজার হাজার বিঘা সম্পত্তি বানানোর অভিযোগও সামনে এসেছে।
ভুয়ো কাগজপত্র তৈরি করে, ভুয়ো লেনদেন দেখিয়েই কোটি কোটি টাকা অন্যত্র পাচার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শাহজাহানের মেয়ের নামে সংস্থা শেখ সাবিনা ফিশারিকে ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১২-২৩ সাল পর্যন্ত কেবলমাত্র দু'টি সংস্থা থেকে শাহজাহানের এই কোম্পানিতে ঢুকেছিল ১৩৭ কোটি টাকা। চার্জশিট অনুযায়ী, শাহজাহান তার মেয়ে শেখ সাবিনার নামে এই ব্যবসা চালাত। বিশেষ করে কাঁচা চিংড়ির ব্যবসায় কালো টাকা খাটানো হতো।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন