মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় পাশ হল ‘অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু (পশ্চিমবঙ্গ অপরাধ আইন সংশোধনী) বিল ২০২৪’। বিরোধী দল বিজেপির পূর্ণ সমর্থনে বিধানসভায় এই বিল পাশ হয়। তবে বিল পাশে সমর্থন থাকলেও কেন্দ্রের ন্যায় সংহিতা চালু না করে পৃথক বিল আনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিজেপি।
কেন্দ্রের আনা ন্য়ায় সংহিতাতে ধর্ষণের ঘটনায় কড়া শাস্তির বিধান থাকলেও, রাজ্য তা কার্যকর করেনি বলে এদিন বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা মমতা জানান, বিরোধী দল এবং রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই, লোকসভা নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি ন্যায় সংহিতা চালু করেছে মোদী সরকার। তাতে রয়েছে বিস্তর ফাঁক। তবে রাজ্যের আনা ‘অপরাজিতা বিল’-এ সেই ফাঁক পূরণ হয়েছে বলে এদিন বিধানসভায় জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন অপরাজিতা বিল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের নয়া সংশোধনী বিলে তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল – বর্ধিত শাস্তি, দ্রুত তদন্ত এবং দ্রুত ন্যায় বিচার।
নয়া সংশোধনী বিলে রয়েছে -
১। ধর্ষণ এবং যৌন হিংসার শাস্তি হোক কঠোরতম। ন্যায় সংহিতা এবং পকসো আইনে যে শাস্তির বিধান রয়েছে, তা এই আইনে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
২। ধর্ষণ ও গণধর্ষণে ১০-২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে ন্যায় সংহিতায়। বিশেষ ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন। বিলে তা বাড়িয়ে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড এবং গুরতর অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে।
৩। ধর্ষণ এবং গণধর্ষণে নির্যাতিতার মৃত্যু হলে বা তিনি মৃতপ্রায় অবস্থায় পৌঁছে গেলে ন্যায় সংহিতায় ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং যাবজ্জীবনের উল্লেখ রয়েছে। নয়া বিলে সেটা জরিমানা-সহ মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে।
৪। ধর্ষিতা বা নির্যাতিতার চিকিৎসা এবং তাঁর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিধান রয়েছে। অ্যাসিড হামলার ঘটনায় ন্যায় সংহিতায় ১০ বছরের কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন এবং জরিমানার বিধান আছে। নয়া বিলে যাবজ্জীবন এবং মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে।
৫। ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত তদন্তের জন্য অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। এফআইআরের ২১ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে তদন্ত। ব্যতিক্রমী ঘটনার ক্ষেত্রে সময়সীমা আরও ১৫ দিন বাড়ানো যেতে পারে।
৬। শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে সাত দিনের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে সাক্ষ্যগ্রহণ। দ্রুত বিচার হবে বিশেষ আদালতে। চার্জশিট জমা পড়ার ৩০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে বিচার। দ্রুত বিচারই শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ।
৭। নির্ভয়া তহবিলের ৬০ শতাংশ টাকা দেয় কেন্দ্র, ৪০ শতাংশ দেয় রাজ্য। নির্ভয়া ফাণ্ডে কেন্দ্রের বরাদ্দ ১০৮ কোটি ৭৯ লক্ষের মধ্যে এখনও পর্যন্ত রাজ্য ৮১ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা পেয়েছে। রাজ্য দিয়েছে ৫৪ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ খরচ হয়েছে। আরও ১৭ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা দেবে রাজ্য।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন