আরজি কর কাণ্ডে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। এমনকি 'বিতর্কিত' অধ্যক্ষ ড. সন্দীপ ঘোষকে ছুটিতে পাঠানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
মঙ্গলবার আরজি কর কাণ্ড নিয়ে আদালতে প্রথম পর্বের শুনানি শেষ হয়েছে। মামলাটির শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলাকারী পক্ষ থেকে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি জানান, "একজন অধ্যক্ষ লাগাতার আন্দোলনের মুখে পড়ে সকালে ইস্তফা দিলেন এবং বিকেলে নতুন নিয়োগ পেয়ে গেলেন। কেন এমনটা হবে?"
রাজ্যের আইনজীবী বলেন, "তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যেই ৩০-৪০ জনের বয়ান নিয়েছে পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে আরও অনেকে নাকি জড়িত রয়েছে এই ঘটনার সাথে। তবে তদন্তে তেমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। খুব শীঘ্রই বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়া হবে"।
প্রথম পর্বের শুনানি শেষে আরজি কর কাণ্ডে কেস ডায়েরি তলব করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। প্রধান বিচারপতি জানান, "সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগপত্র এবং নিয়োগপত্র জমা করতে হবে। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের আবেগ গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। তাঁদের এক সহকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। দুপুর ১ টার মধ্যে কেস ডায়েরি জমা করতে হবে। এটাও ঠিক লাগাতার ধর্নার ফলে সাধারণ রোগীদের ক্ষতি হবে। রোগীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত"।
তিনি আরও জানান, "চিকিৎসক সন্দীপ ঘোষ কি এতটাই প্রভাবশালী, যে ইস্তফার ৪ ঘন্টার মধ্যে নতুন নিয়োগপত্র পেয়ে গেলেন? এইভাবে তাঁকে কেন পুরস্কৃত করা হল? প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে কেন রক্ষা করার চেষ্টা হচ্ছে? বিকেলে ৩টের মধ্যে ছুটির আবেদন জানিয়ে সন্দীপ ঘোষকে লম্বা ছুটিতে যেতে বলুন। নয়তো আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব"।
তিনি আরও বলেন, "প্রথমে পরিবারকে বলা হয় মেয়ে অসুস্থ। পরে বলা হয়, আত্মহত্যা করেছেন মেয়ে। পরিবারকে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলা হলে, বুঝতে হবে প্রশাসন সাথে নেই। এটা তো কোনও ব্যক্তি জেলের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মৃত বলে জানা গেছে তেমন নয়। মৃতা তো হাসপাতালেই ছিলেন, তিনি তো সেখানকার অংশ। চিকিৎসকরা তাদের সারাজীবন উৎসর্গ করেন।"
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে আরজি করের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেন সন্দীপ ঘোষ। স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে সরকারী চাকরিও ছাড়েন তিনি। কিন্তু বিকেলেই তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা হয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন ন্যাশনাল মেডিক্যালের পড়ুয়ারা।
আরজি কর কাণ্ড নিয়ে মোট পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টে। এর মধ্যে একটি নির্যাতিতার মা-বাবা করেছেন, তদন্ত সঠিকভাবে হচ্ছে না এই দাবি জানিয়ে। প্রধান বিচারপতি সমস্ত মামলা একসাথে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন