আবারও কলকাতা হাইকোর্টের একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে পড়ল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মনোনয়ন জমা দিয়েও কেন প্রায় ২০ হাজার ৫৮৫টি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হল, কমিশনের কাছে এর জবাব চাইল কলকাতা হাইকোর্ট।
আদালতের চোখে কোনও মতেই যেন 'গুডবয়' হতে পারছে না কমিশন। কখনও কলকাতা হাইকোর্ট, কখনও সুপ্রিম কোর্ট; আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে বারবার ধাক্কা খেতে হচ্ছে কমিশনকে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে ফের একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল তাদের। কেন ২০ হাজারেরও বেশি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে, কমিশনের কাছে জানতে চাইল আদালত। মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা 'বড্ড কম' বলে এক সময় অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। কিন্তু মনোনয়ন জমা দিয়েও কেন এত মনোনয়ন প্রত্যাহার, এই প্রশ্নের জবাব হাইকোর্টে দিতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি.এস শিবজ্ঞানমের সিঙ্গেল ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার রাজ্য কমিশনের কাছে আরও জানতে চেয়েছে, নির্বাচনের আগেই কীকরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার নির্দিষ্ট একটি ব্লক থেকে ২৭৪টি আসনে একটি নির্দিষ্ট দলের প্রার্থীরাই জিতে যান? এখানেই শেষ নয়। কমিশনের কাছে আদালতের শেষ প্রশ্ন ছিল মইনুদ্দিন গাজীকে নিয়ে। সুদূর সৌদি আরবে বসে তিনি পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের প্রার্থী পদের জন্য মনোনয়ন জমা করেছেন। বিদেশে বসে একজন কীভাবে মনোনয়ন জমা করতে পারেন, কমিশনের কাছে স্পষ্ট জবাব চেয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি। ২৭ জুনের মধ্যে এই সমস্ত প্রশ্নের লিখিত জবাব কমিশনকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই মামলায় আগামী শুনানি হবে ২৮ জুন।
শুক্রবার এই মামলার পরে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরীর করা মামলার শুনানি করেন। সেই মামলার শুনানি করতে গিয়ে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি উঠে আসে। অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক কুমার চক্রবর্তী কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আদালতকে জানিয়েছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আবেদন অনুযায়ী ৮২ হাজার সশস্ত্র কেন্দ্রীয় সেনা জওয়ান রাজ্যে মোতায়েন করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তাও তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের মতো যদি পাঁচ দফায় নির্বাচন হতো, সেক্ষেত্রে এত বিশাল পরিমাণ বাহিনী রাজ্যে পাঠানো আরও সুবিধাজনক হতো।
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে প্রথমে মাত্র ২২ কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনী চাইলেও পরে সুপ্রিম কোর্টের কাছে ‘বকা’ খেয়ে মন বদলায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের পূর্ব নির্দেশ মেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে মোট ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য আবেদন পাঠায় কমিশন। অর্থাৎ প্রথমে ২২ ও পরে আরও ৮০০, সব মিলিয়ে ৮২২ কোম্পানি বা ৮২ হাজার সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী নির্বাচনকালে গোটা রাজ্যে থাকবে। কিন্তু এই বিশাল পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনীতেও খুশি নন বিরোধীরা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী দুজনেই দাবি করেছেন, ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীও কি পর্যাপ্ত হবে? কারণ, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় এবার রাজ্যে ভোটার, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ও জেলার সংখ্যা অনেক বেশি। পাশাপাশি এক নয়, একাধিক দফায় নির্বাচন করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
-With IANS Inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন