‘‘একটা সুদীপ্তকে ওরা শেষ করেছে। লাখ লাখ সুদীপ্ত তৈরি হয়েছে। সুদীপ্তরা ক্যাম্পাসে না থাকলে ভর্তির সময় তোলাবাজি হয়। গায়ের জোরে ইউনিয়ন দখল করা হয়। আর যেখানে এসএফআইয়ের ইউনিয়ন আছে সেখানে নয়া শিক্ষা নীতি বাতিল এবল ছাত্র ভোটের দাবিতে গণভোট হয়, যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।’’ রবিবার কলকাতায় শহীদ ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্ত স্মরণে এক জমায়েতে একথা বলেন এসএফআই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস।
এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক দীপ্সিতা ধর বলেন, ছাত্রদের রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে বিজেপি এবং তৃণমূল। সকলের শিক্ষার দাবিতে যে লড়াই সুদীপ্ত গুপ্তরা করেছিলেন সেই লড়াই আমাদের সফল করে তুলতে হবে।
এদিনের সমাবেশে এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি প্রতীক-উর রহমান বলেন, ‘‘দশ বছর আগে পুলিশ হেপাজতে সুদীপ্ত গুপ্ত যখন মারা যান সেই ঘটনাকে ছোট ঘটনা বলে চিহ্নিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ সেই ছোট ঘটনা বড় ঘটনায় পরিণত হয়েছে।’’
প্রতীক-উর আরও বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার রাজ্যে বন্ধকী কারবার শুরু করেছে। ওরা স্কুল তুলে দিয়ে সেই জমি বন্ধক দিতে চাইছে। আর রাজ্যটাকে বিজেপির হাতে বন্ধক দিয়ে দিয়েছে।’’
এদিনের সমাবেশে এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওরা ভেবেছিল প্রশ্ন করার কোন লোক থাকবে না। ছাত্র আন্দোলন দমিয়ে দেবে। তৃণমূল সরকার ভুল ভেবেছিল। আর তাই আজ গত একদশকের মধ্যে প্রথমবার এসএফআইয়ের সদস্য সংখ্যা এক লক্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে।’’
সৃজন বলেন, ‘‘মিলি চক্রবর্তীর চিঠিটা আসল বিষয় নয়। আসল বিষয় হলো রাজ্যে ৮২০৭টি স্কুল বন্ধ হচ্ছে। কলেজে কলেজে ফি বাড়ছে। নয়া শিক্ষা নীতি চালু হচ্ছে। আমাদের সেসব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে। আমাদের প্রশ্ন তুলতে হবে মিড ডে মিলের বরাদ্দ কমা নিয়ে। শিক্ষা বাঁচাতে ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পৌঁছাতে হবে কলেজের গেটে গেটে।’’
রবিবারের সমাবেশে সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, সুদীপ্ত গুপ্তরা বুঝিয়েছে শিক্ষা এবং শিক্ষার জন্য সংগ্রাম। সুদীপ্ত গুপ্তরা বুঝিয়েছে ক্যাম্পাস এবং ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা। আর অন্যদিকে গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিল শাসক দল। এঁরা মানুষে মানুষে বিভাজন বাড়াতে ব্যস্ত। বর্তমানকে ধ্বংস করছেন। ভবিষ্যতের স্বপ্নকে তছনছ করছেন। বাংলাকে যারা ধ্বংস করছেন তারা বুঝে নিতে পারেন আগামী দিনে এই তরুণরাই তাঁদের অধিকার বুঝে নেবে।
এদিনের সমাবেশে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “এক দশক ধরে দক্ষিণপন্থা আমাদের রাজ্যের ছাত্র আন্দোলনকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। ওরা নতুন প্রজন্মকে ইনক্লাব জিন্দাবাদ ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ছাত্র যুবরা প্রতিকূলতার মুখেও বুক চিতিয়ে লড়াই করে নিজেদের জমি পুনরুদ্ধার করেছে।”
এদিন মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, “চুরি হচ্ছে প্রতিদিন। মিড ডে মিলের টাকা চুরি হচ্ছে, আইসিডিএস-এর খাবার টাকা চুরি হচ্ছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা চুরি হয়েছে। বিধবা ভাতা, ইমাম ভাতা, তফশিলী জাতি, উপজাতি, বেকার যুবকদের স্বনির্ভর করার স্কীমের টাকা চুরি হয়েছে। হিসেব অনেক লম্বা।”
শহীদ ছাত্র নেতা কমরেড সুদীপ্ত গুপ্তর ১০ম শহীদ দিবসে কলকাতায় ছাত্র সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহঃ সেলিম, পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, ছাত্র সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস, দীপ্সিতা ধর, রাজ্য নেতৃত্ব সৃজন ভট্টাচার্য, প্রতীক উর রহমান সহ অন্যান্যরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন