কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে বাতিল হয়ে গেল সমস্ত নিয়োগ। বাতিল হয়ে গেল প্রায় ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি। বাতিল হয়ে গেল ২০১৬-র পুরো প্যানেল। ভোটের মধ্যেই আদালতের এই নির্দেশ রাজ্য সরকারের কাছে বড়ো ধাক্কা। গত তিন বছরে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দেওয়া শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এদিনই রায় ঘোষণা করে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। গত ২০ মার্চ এই মামলার শুনানি শেষ হয়।
কলকাতা হাইকোর্টের এদিনের রায়ে উঠে আসে নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ। এদিনের রায়ের পর এসএসসি-কে নতুন করে শুরু করতে হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া। আদালত জানিয়েছে, এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাদের সকলকে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরত দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের এই টাকা পুনরুদ্ধার হয়েছে কিনা তা আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে। যারা এই অতিরিক্ত পদ তৈরি করে চাকরি দিয়েছিলেন তাদের হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই।
২০১৬ সালের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-র পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই এদিন বাতিল করে দিয়েছে আদালতের ডিভিশন নির্দেশ। ওএমআর শিট ম্যানুপুলেশন করে যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের সকলের চাকরি বাতিল বলে ঘোষণা করেছে আদালত। আদালত জানিয়েছে, এসএসসির ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র দ্রুত এসএসসির সার্ভারে আপলোড করতে হবে।
প্রথম থেকেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এদিন হাইকোর্ট জানায়, ওএমআর শিট বিকৃতি ঘটানো হয়েছিলো এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পরেও অনেককে ঘুরপথে চাকরি দেওয়া হয়েছিল।
আদালত আরও জানিয়েছে, মানবিক কারণে সোমা দাস নামক এক চাকরিপ্রাপকের চাকরি থাকবে। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় মানবিক কারণে তাঁর চাকরি বাতিল করা হয়নি।
নাইসার আধিকারিকের বাড়ি থেকে যে তিন হার্ড ডিস্ক উদ্ধার হয়েছিল তার বৈধতা আছে বলেও এদিন জানিয়েছে আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানিয়েছে এই গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াই অবৈধ এবং এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ১৭ ধরণের দুর্নীতি হয়েছিল।
আদালতের নির্দেশ অনুসারে সমস্ত ওএমআর শীট পুনঃমূল্যায়ন করে নতুন করে প্যানেল প্রকাশ করতে হবে। এই নির্দেশের ফলে যারা বেআইনি পথে, দুর্নীতি করে, ওএমআর শিট বিকৃতি করে যারা ঘুর পথে চাকরি পেয়েছিলেন তাদের চাকরি থাকবে না। এই সমস্ত ওএমআর শিট যাতে জনসাধারণ দেখতে পায় তাই এই সমস্ত শিট ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে।
আদালত জানিয়েছে এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হবার পরে যারা চাকরি পেয়েছে তাদের প্রাপ্ত বেতন ১২ শতাংশ সুদ সহ আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। জেলার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের পরবর্তী ২ সপ্তাহের মধ্যে ওই টাকা আদালতের কাছে জমা দিতে হবে।
এদিন সকাল সাড়ে দশটায় ২৮১ পাতার এই রায় পড়তে শুরু করেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন