মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আগামী ৬ মে মিছিলের ডাক দিয়েছেন রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা। হরিশ মুখার্জি রোডের উপর দিয়ে হওয়া সেই মিছিলের অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার, শর্ত সাপেক্ষে এই মিছিলের অনুমতি দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
বকেয়া ডিএ-র দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা। অনশন, ধর্মঘট, গণ-ছুটি, ডিজিটাল অসহযোগ, কর্মবিরতি-র পর এবার হরিশ মুখার্জি রোড দিয়ে মিছিল করতে চলেছেন তাঁরা।
জানা যাচ্ছে, মিছিলের জন্য ডিএ আন্দোলনকারীদের তিনটি বিকল্প রুটে মিছিলের প্রস্তাব দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু, তাতে রাজি হননি ডিএ আন্দোলনকারীরা।
এদিন, হরিশ মুখার্জি রোড নিয়ে আপত্তি জানায় পুলিশ। রাজ্য প্রশাসনের দাবি করে, এটি শহরের অন্যতম স্পর্শকাতর এলাকার একটি রাস্তা। কিন্তু, হরিশ মুখার্জি রোড দিয়ে মিছিল করতে অনড় থাকেন আন্দোলনকারীরা। ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ওই রাস্তাতেই।
বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি মান্থা বলেন, 'প্রায় দিনই শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা হাজরা মোড়ে ধর্না, বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। তাহলে হঠাৎ হরিশ মুখার্জি রোড নিয়ে এত আপত্তি কেন?'
জবাবে, সরকারি আইনজীবী বলেন, ওই রাস্তা নিরাপত্তার দিক থেকে ‘স্পর্শকাতর এলাকা’ হিসাবে চিহ্নিত রয়েছে। সেখানে মিছিল থেকে যদি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হয়, তবে তার দায় কে নেবে? ওই রাস্তার কিছু অংশে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।
এরপর মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য দাবি করেন, মিছিলের আবেদন করার পরেই কিছু এলাকায় গত ৩ মে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে।
তখন বিচারপতি মান্থা বলেন, 'তা হলে তো মিছিল ওই রুটে হলে বলতে হবে, শহরের সবচেয়ে শান্ত এলাকা দিয়ে মিছিল যাচ্ছে।' এরপরেই, শর্ত সাপেক্ষে হরিশ মুখার্জি রোড মিছিলের অনুমতি দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
বিকাশরঞ্জনের উদ্দেশ্যে বিচারপতি মান্থা বলেন, 'সকলে যে আশঙ্কা করছে, আদালত তা বুঝতে পেরেছে। ওই এলাকায় কোনও রকম অশান্তি হবে না সেই ভাবে মিছিল করতে হবে। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে ওই এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি শেষ করতে হবে।'
আগামী ৬ মে, শনিবার এই মিছিলের ডাক দিয়েছে সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির সম্মিলিত মঞ্চ - সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবারই, মহার্ঘ ভাতার দাবিতে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটিকে নবান্ন অভিযানে অনুমতি দেন বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা। আজ সেই নবান্ন অভিযান করেছেন সরকারি কর্মচারীরা।এখানেও মিছিলের অনুমতি দিচ্ছিল না পুলিশ। একইসঙ্গে, সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশ্যে একাধিক প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি।
এদিন বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা বলেন, ‘যে বিধিনিষেধের কথা বলছেন, তা শাসকদলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য তো? রেড রোড বন্ধ করে যখন মিছিল হয়, তখন পুলিশের আসুবিধা হয় না? কিছু দল যখন মিছিল করে তখন গোটা কলকাতা স্তব্ধ হয়ে যায়। আমি শুধু শাসকদলের কথা বলছি না। মানুষ পরিবার নিয়ে রাস্তায় বেরোতে চায়, কিন্তু বেরোতে পারেন না! তখন পুলিশের অসুবিধা হয় না?’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন