Chit Fund Scam: চিটফান্ড দুর্নীতিতে টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া না শুরু হলে এবার ED, CBI, নবান্ন ঘেরাও

সোমবার কলকাতার Y Channel-এ চিট ফান্ড সাফারার্স ইউনাইটেড ফোরামের ডাকে এক সভা থেকে এই ডাক দেওয়া হয়। সভায় ছিলেন CPIM কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

অবিলম্বে টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া না শুরু হলে চিটফান্ড দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্তরা এবার ইডি, সিবিআই ও নবান্ন ঘেরাওয়ের পথে হাঁটবেন। সোমবার কলকাতার ওয়াই চ্যানেলে চিট ফান্ড সাফারার্স ইউনাইটেড ফোরামের ডাকে এক সভা থেকে এই ডাক দেওয়া হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য সহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃত্ব। উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ থেকে বিশাল সংখ্যক চিটফান্ড প্রতারিত এজেন্ট, আমানতকারী এদিনের সভায় যোগ দিয়েছিলেন।

২০১৩ সালে রাজ্যে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি সামনে আসে। ২০১৪ সালে এই কান্ডে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। যদিও দীর্ঘ আট বছর পরেও থমকে রয়েছে তদন্ত প্রক্রিয়া। এদিন সভায় বক্তারা বলেন, তৃণমূল ও বিজেপির গোপন আঁতাত, বোঝাপড়ার রাজনীতির কারণে তদন্ত প্রক্রিয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে। ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছেন আমানতকারী, এজেন্টরা। অবিলম্বে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে বলে দাবি জানানো হয়।

সোমবারের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ডেপুটেশন দেবার কথা থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী ডেপুটেশন নেননি। নবান্ন থেকে জানানো হয়, কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কায় তিনি ডেপুটেশন নিতে পারবেন না। যদিও রাজ্যপাল ডেপুটেশন নিয়েছেন।

এদিনের বিক্ষোভ সমাবেশে সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, কৃষক আন্দোলনের মত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথে হেঁটে দাবি আদায় করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন জারি রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, তৃণমূল বিজেপির গোপন আঁতাতের কারণেই ইডি, সিবিআই, সেবি সহ অন্যান্য সংস্থা ক্রমশ তদন্ত প্রক্রিয়ায় গতি কমিয়েছে।

সিপিআই(এম) সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার ক্ষতিগ্রস্ত, প্রতারিতদের টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া আটকে দিয়েছে। হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট সারদা, রোজভ্যালি সহ বিভিন্ন চিটফান্ডের সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলেও সেই কাজে বাধা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। আসলে চিটফান্ডের টাকায় তৈরি হয়েছে এই সরকার। তাই সিট তদন্তের নামে আসলে প্রমাণ লোপাট করেছে। প্রতারিতদের সহযোগিতা করছে না এই সরকার।

তিনি আরও বলেন, চিটফান্ডের টাকাতেই মমতা ব্যানার্জির ছবি কেনা, হেলিকপ্টার যাত্রা। আর এই কেলেঙ্কারি সামনে আসতেই তিনি ছবি আঁকা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই দুর্নীতিতে আদালত রায় দিয়েছে ৫৪টি চিটফান্ড সংস্থার সম্পত্তি বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরত দিতে হবে। সেজন্য এস পি তালুকদার কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এই কমিটির সঙ্গে কোনও সহযোগিতা করছে না রাজ্য সরকার। একইভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও আশাব্যঞ্জক নয়। এই অবস্থায় দুই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি না করলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। তাই আন্দোলনে নামা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই।

এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, চিটফান্ড তদন্তে ২০১৪ সালে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। যদিও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সব তদন্ত চাপা পড়ে গেছে। সিট প্রধান রাজীব কুমারের গ্রেপ্তারি এড়াতে ধর্নায় বসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আজ পর্যন্ত রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিতে পারেনি সিবিআই। অন্যদিকে চিটফান্ডে সর্বস্বান্ত হয়ে রাজ্যে ২০০-র বেশি এজেন্ট, আমানতকারী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। সারা দেশে এই সংখ্যা ৩০০-র বেশি।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের চিটফান্ড মামলায় এর আগে শাসকদলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, প্রভাবশালীর নাম সামনে এসেছে। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে সিবিআই, ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন। গত ২৮ জুন সারদা মামলায় প্রতারিতদের টাকা ফেরানোর নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখার্জী ও শুভেন্দু সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ-এর এই নির্দেশের পাশাপাশি সারদার বাজেয়াপ্ত সম্পত্তিগুলি বিক্রি করে সেই অর্থ আদালতে জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালত তার রায়ে জানায়, আগামী তিন মাসের মধ্যে সারদার গোষ্ঠীর সমস্ত বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করতে হবে। বিক্রি করে যে পরিমাণ অর্থ উঠবে তা তালুকদার কমিটিকে দিতে হবে। সেবির হাতে থাকা তিনটি সম্পত্তিও বিক্রির নির্দেশ দেয় আদালত।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত হয় এস.পি. তালুকদারের কমিটি। ২০১৬ সালে এই কমিটি নিজেদের কাজ শুরু করে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সারদার টাকা উদ্ধার করে এই কমিটি। এছাড়াও প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য শ্যামল সেনের নেতৃত্বে কমিটি তৈরি করা হয়।

ফাইল ছবি
Icore Chit Fund Case: মানস ভুঁইয়াকে তলব CBI-এর, আগামীকাল হাজিরার নির্দেশ

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in