'কমিউনিস্টরা ব্রিটিশদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেনি, তৃণমূল-আরএসএস-বিজেপির সামনেও বশ্যতা স্বীকার করবে না। কাকাবাবু আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছেন।' ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুজফফর আহমেদের জন্ম দিবসের অনুষ্ঠানে কেন্দ্র ও রাজ্যকে একযোগে আক্রমণ করে একথা বললেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
শুক্রবার মুজফফর আহমেদ, যিনি কাকাবাবু নামে বেশি পরিচিত, তাঁর ১৩৪ তম জন্ম দিবস উপলক্ষ্যে কলকাতার মহাজাতি সদনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল রাজ্য সিপিআইএম। অনুষ্ঠানে কাকাবাবু সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেলিম বলেন, "আসলে আমরা কাকাবাবুকে স্মরণ করি ব্যক্তি হিসেবে নয়। জন্মদিনটা উপলক্ষ্য, আসল লক্ষ্য - প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সামান্য খড়কুটো দিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার যে প্রয়াস। এখান থেকে আমরা অভিজ্ঞতা নিই, প্রেরণা নিই। শত বাধা বিপত্তির মোকাবিলা করে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে মজুর-কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ মানুষ-শুভানুধ্যায়ী-বুদ্ধিজীবী সকলকে এক জায়গায় জড়ো করেছিলেন তিনি। অধিকাংশ সময় জেলে কাটিয়েছেন তিনি। জেল থেকে বেরিয়েও নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর না দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য লড়েছেন। ঝাড়ুদার, দারোয়ান থেকে শুরু করে কবি, শিল্পী সকলকে জড়ো করেছিলেন তিনি। ১৯২০ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন হওয়ার পর স্বাধীনতা আন্দোলনের চরিত্র পাল্টে গেল। শ্রেণী আন্দোলন জন আন্দোলনের রূপ নেয়। শুধু আন্দোলনের নয়, দাবির রূপও পাল্টে গেলো কমিউনিস্ট পার্টির লড়াইয়ের জন্য। তারা জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলো।"
"১৯২৬ সালে গণবাণী পত্রিকায় মুজফফর আহমেদ স্বাধীন ভারতে সার্বজনীন ভোটাধিকার, জমিদারি উচ্ছেদ, শ্রমিকদের মজুরি ও কাজের সময়, সামাজিক কুপ্রথার অবসান, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, প্রেস ও বক্তব্যের স্বাধীনতা, নারী-পুরুষ সমানাধিকার ইত্যাদি দাবির কথা তুলে ধরেছিলেন। আজকের দিনে এই সবগুলোই আক্রান্ত। সেই সময়ে নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবিতাটি লিখে কাকাবাবুকে শুনিয়েছিলেন। আজ যদি এমন কবিতা কেউ লেখে তাহলে শাসকরা কী করবে? দেশদ্রোহী বলে জেলে ঢুকিয়ে দেবে তাঁকে", বলেন সেলিম।
রাজ্য ও কেন্দ্রকে আক্রমণ করে বাম নেতা বলেন, "আমরা ব্রিটিশদের আধিপত্যের কাছে বশ্যতা স্বীকার করিনি, সাম্প্রদায়িক আরএসএস এবং চিটিংবাজ তৃণমূলের আক্রমণের কাছেও বশ্যতা স্বীকার করব না। যাঁরা শিরদাঁড়া বিকিয়ে দিতে রাজি নয়, তাঁদের সবাইকে একজোট করে এই দুই বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করব আমরা।"
জিএসটি, কর্মসংস্থান নিয়েও সরব হন সেলিম। তিনি বলেন, "জিএসটি বসিয়ে গরিবের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে সরকার। মানুষের কাজ, খাদ্য সব অধিকার কেড়ে নিয়ে কিছু ভাতা দেখিয়ে জোর করে আনুগত্য আদায় করার চেষ্টা করছে। জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশ যে নতুন প্রজন্ম, তাঁদের কাজের সুযোগ কেড়ে নিয়ে সেখানে দুর্নীতি করছে। এই সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে কমিউনিস্টদের।"
এসএসসি দুর্নীতিতে ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রকাশ্যে জুতো ছুঁড়ে মারেন গৃহবধূ শুভ্রা ঘোড়ুই। সেই প্রসঙ্গ তুলে সেলিম বলেন, "শ্রমজীবী মানুষের রোষ কেমন হয় টের পাচ্ছেন? পার্থ চ্যাটার্জিকে যদি উডল্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো তাহলে হয়তো কেউ তাঁকে জুতো ছুঁড়ে মারার সাহস দেখাতে পারতো না। কিন্তু ইডি তাঁকে শ্রমজীবীদের হাসপাতালে (ইএসআই) নিয়ে গেছিল বলেই সেখানে শ্রমজীবী গৃহবধূ রোষ দেখিয়েছেন। মোদী, দিদির হাতে আক্রান্ত এই শ্রেণীর সব মানুষের কাছে আমাদের যেতে হবে, তাঁদের রোষকে জাগাতে হবে। তাঁদের সংগঠিত আন্দোলনে টেনে আনতেই হবে। এটাই এই সময়ের চ্যালেঞ্জ।"
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর বাসভবনে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের বকেয়া আদায় নিয়ে বৈঠক করেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিকে কটাক্ষ করে সেলিম বলেন, "বকেয়া আদায় করার জন্য একান্ত বৈঠক করতে হয়? সেখানে তো অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করা উচিত ওনার। অফিসারদের তো এই কাজের জন্যই নিয়োগ করা হয়েছে। আমি রাজ্যের অফিসারদের বলছি অন্যায় যে করে অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন